শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

অভিমান



স্মৃতিসৌধের শেষ মাথায়, কয়টা পলাশ গাছ আছে। পলাশের বসন্ত ভালো লাগে। তাই হয়ত বসন্ত এলে রাস্তাটাকে সে চাদরে ঢেকে দেয়। লেকটা যেখানে ঘুরে গেছে, সেখানটায়ই গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। বসন্তে এই এলাকাটা একদম কমলা হয়ে থাকে। সেই কমলা চাদরটার টানেই হয়ত প্রতি বসন্তে নিয়মিত এসে বসে থাকি জায়গাটায়। এবছর শুরুটাই করলাম শীতে।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এল। এপাশটা ভোর, সকাল, সন্ধ্যা; সবসময়েই নির্জন। হয়ত শুধু পলাশ ফুল না, নির্জনতাটাও আমাকে টানে। এক দিকে ফিরলে জল দেখতে পাব, সেখানে শাপলা কিংবা পদ্ম ভাসবে, অন্যদিকটায় ফিরলে ডাঙ্গা দেখতে হবে, তবে সে ডাঙ্গা ছেয়ে আছে পলাশে। তাই আমি লেককে উপেক্ষা করে অন্যপাশে ফিরে থাকি। আজও তেমনটা আছি।
যাবেন?
কোমল স্বরের একটা নারীকণ্ঠ। এক শব্দের বাক্যে মায়াবি একটা টান আছে। টানটা এত বেশি, অন্যমনস্কতা টুপ করে বলিয়ে বসতে পারে, যাব। আমি তবু তাকালাম।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল



 “সব ছেড়ে চলে এলে?”
“এলাম।”
“তুমি তো বলতে তুমি নৈরাশ্যবাদী, ভীতু।”
“তবু তো এলাম। ওটা বকুলের মালা নাকি?”
“হু। দেখেছ কেমন সুবাস?”

বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

দীর্ঘশ্বাস


কী রাঁধছ?’  
আমার স্ত্রীর ছোট্ট মেসেজ ফোনে ভেসে উঠল। আমার খানিকটা দুশ্চিন্তা হল। উত্তর দিতে হবে, এবং কিছু একটা মিথ্যে বলতে হবে। কারন আমি এখনো বিছানায় শুয়ে একটা বই পড়ছি। দুপুর যদিও দুইটা বাজে, মুখও ধোয়া হয়নি। ফিজিক্সের শিক্ষিকা বিয়ে করার নানারকম ঝামেলা। ভ্রু কুঁচকে বকাবকি করতে তাঁদের একদম মায়া হয় না। আমি অকম্মা, ঘরে বসে দু চারটা কলাম লিখি পত্রিকায়, আর লবণাক্ত-আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকায় পানির সমস্যা সমাধান নিয়ে নানারকম কাজ করি। এই কিছুদিন ইউনিসেফ এর সাথে কাজ করলাম,

শৈশবের তালপুকুরওয়ালা বাড়ি

আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন তেমন দুষ্টুমি শিখিনি। এর একটা কারন হয়ত বাবা শিক্ষক, এবং তাতে বাসার পরিবেশটা অন্যরকম ছিল। দুষ্টুমির জন্য বকা খাওয়ার ব্যাপারটা একদম মনে পড়েনা। শুধু দুপুর বেলা যখন মা ঘুমোতেন, তখন অভ্যাস ছিল আস্তে করে উঠে গিয়ে খেলতে বসা। বাড়ির বাইরে যেতাম না। বিশাল বাড়ির কোন এক কোনে কিছু একটা খেলা আবিষ্কার করে সেই খেলায় মত্ত হতাম। ধুলোবালি মাখা অন্যতম অভ্যাস ছিল। আমার মনে পড়ে আমার তেমন খেলনা ছিল না। নিজের কোন প্রিয় খেলনার কথা আপাতত মনে করতে পারছি না। ছয়-সাত বছর বয়সের খেলনা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি ইয়ো-ইয়ো। মাঝে মাঝেই ইয়ো ইয়ো কিনতাম। এছাড়া তেমন কিছু না। খুলনা শহরের আমাদের ঐ বাড়িতে একটা পুকুর আছে। গত দশ-পনের বছরে নানা ভাড়াটিয়ারা সেই পুকুরটার যে হাল করেছে, এখন গেলেই খুব মন খারাপ হয়। পুকুরপাড়ে ছিল তালগাছ, সেটায় আলো পড়ছেনা বলে তেমন বড় হচ্ছেনা। আরেকটা ছিল ছফেদা গাছ। সেই পুকুরে সারা বছর পানি থাকত। বর্ষাকালে খুব বৃষ্টি হলে পানি থৈ থৈ করত। কখনো পানি উঠে ঘরের দেড়গোড়া পর্যন্ত চলে আসত, আমরা জানালায় বসে দেখতাম সেটা মনে পড়ে।

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

হেই টিচার, লীভ আস কিডস এলোন!


"হেই টিচার! লীভ আস কিডস এলোন"
হাতুড়ি মেরে জীবনটা পঙ্গু করে দিতে কে বলেছে আপনাদেরকে? আপনাদের জীবিকা। তাই বলে এত নির্লজ্জভাবে? পিংক ফ্লয়েড ব্যান্ডের গানগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখছি। প্রিয় শিক্ষকেরা, আপনারা বাবার মত, তবে সৎ বাবা।
ভেবেছিলাম রেজাল্ট নিয়ে লিখবনা কিছুই। কিন্তু তা হল না। প্রচন্ড রাগ লাগছে। আমি এই মাত্রার লুজার নই যে এই অসহ্য রেজাল্ট আমার নামের পাশে দেখতে হবে। পরীক্ষা দিয়েছি জান বের করে। সত্যি কথা হল, এই টর্চার সহ্য করতেই খেটেখুটে পড়েছি অনেক। শেখার ইচ্ছে থেকে খুব অল্প কয়টা কিছু পড়েছি। হলটা কী? একটু থমকাতে পারি, একটা বিষয়ে একটুখানি ঝামেলা হতে পারে। তবে চারটা বিষয়ে ছিটকে পড়ার মত লুজার কোনকালে আমি ছিলাম বলে মনে পড়েনা।

আমাদেরকে মেশিনে ঢুকিয়ে পিষে নুডলস বানাতে আপনাদের কেমন আনন্দ হয়, তা দেখতে ইচ্ছে করে। আপনার ছেলেমেয়েদেরকে যখন আপনার মতই শিক্ষা-পেশাজীবিরা পিষে দেয়, খুব ভালো লাগে? আমার বাবা একজন শিক্ষক। তিনি তার হাজারো শিক্ষার্থীকে এমনভাবে টর্চার করেননি কোনকালে। তাই তাঁর কাছে আপনাদের পিষুনি খুব একটা মধুর লাগার কথা না। তবে তিনি যেহেতু প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছেন জীবনে, নানা জায়গায় নানারকম শিক্ষকদের সাথে কাজ করেছেন, এমন দেশ থেকে শিক্ষক ট্রেইনিং নিয়েছেন, যে দেশে এই নির্লজ্জ খেলা নেই, তিনি জানেন শিক্ষকরা কেমন হয়। তবু সব শেষে এসব তাঁর কাছে অসহ্য।

এই আমি ক্লাস এইটে থাকতে সবচেয়ে ভালো বুঝতাম অংক আর বিজ্ঞানটা। বিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে একটা বাক্য বলেছিলাম, "শ্লা যা লিখেছি! আইনস্টাইন আসলেও পঁচানব্বুই এর নিচে নাম্বার দিতে পারবেনা"।

সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০১৬

একটি সুখি বাঘের আত্মকাহিনী

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ টাইগার মোবাইলস





শুরুর আগে
আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন একটা গল্প লিখেছিলাম, বেশ মন খারাপের গল্প। তখন শিকারীদের হানাদার মনোভাবে বাঘেরা ছিল বড় দুঃখী। সেই গল্পটা পড়ে এই গল্পটা শুরু করতে হবে। গল্পটা পাওয়া যাবে নিচের লিংকে- 

গল্পটা
সেই বাঘেরই মাসি। তাদের এখন সুখের সীমা নেই। তবু তো কিছু দুঃখ থাকে। তাতে কী? দুঃখ তো মানুষেরও আছে। মাসির মেয়েটা হয়েছে বড় চটপটে। কাজে মন নেই, ঘরকন্নায় মন নেই, বিয়েটাও দিতে পারছেন না। মাসি কাল বললেন, বিদ্যুৎ বিলটা দিয়ে আসতে, তাতেও তার আপত্তি। শুধু পারে মুখে লাল রঙয়ের মেকআপ মেখে মস্ত বীর সেজে ঘুরে বেড়াতে, যেন এইমাত্র এক হরিণ শিকার করে এল। আর এসেছে গরমকাল। একটু পরপর লোডশেডিং। অতিষ্ঠ হয়ে পড়তে হবে যে! মাসির কর্তা ঠ্যাঙয়ে রশি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে দুটো বানর নিয়ে এসেছেন বাজার থেকে। লাবণি পয়েন্টে বড় বাজার বসে হরিণের-বানরের। আজ যে হাটবার। 

সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এখনো বিদ্যুৎ আসার নাম নেই। রাত হলেই মশাগুলো বড় জ্বালাতন করে। ধুপ না জ্বাললে গুহায় টেকার উপায় নেই। এই মানুষগুলো হল পাজির পা-ঝাড়া। তাদের বসতিতে লোডশেডিং তো দূরের কথা, দিনের বেলায়ও বাতি জ্বলে। অথচ বনবাসীদের কোন অধিকার যেন নেই। ওদের জমি দখল করে মস্তবড় ইঞ্জিন বসিয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের, অথচ

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬

গেছিরে!


-নাকে আবার কী হল? রক্ত ঝড়ছে যে!
-মেরেছে।
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তা মারলটা  কে?
-একটা মেয়ে!
-গোলমেলে। করেছটা কী?
-আমারও তাই প্রশ্ন।
-ব্যাপারটা কী? তুমি করোনি কিছু?
-আমার তো তাইই ধারনা।
-তবে এমনিতেই মেরে দিল?
-সুযোগ পেয়েছে।
-তবে রে! কিছু করোনি? এসে মেরে দিল?

বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

কেন মেঘ আসে?

আকাশ ভেঙ্গে জল নামল। আমি টুপ করে ঢুকে পড়লাম বাড়িতে। বাড়িটা বড়, কয়েক তলা। সারা বাড়ি জুড়ে হৈচৈ। অনেক মানুষ, ছেলেপুলের অভাব নেই। হৈ-হৈ রৈ-রৈ লেগে আছে হরদম। সিঁড়ি বেয়ে সোজা উঠে গেলাম দোতলায়। একদম শেষ যে ঘরটা, সেটা আমাদের। ঘরে ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া! পরিবারের সবাই যে একঘরে! ভাই-বোনেরা আর মা। বাবা নেই। আর আছে বালিকা। তাতেই চমকে গেলাম। বালিকা আমার ওপর ক্ষেপে আছে সে মাসখানেক হল। একদম তাওয়ায় রুটি সেঁকবার মত চটে আছে। মুখ-দেখাদেখি বন্ধ। তাই তাঁকে ঘরভর্তি পরিবারের মাঝখানে দেখে তো না চমকে উপায় নেই। বাবা কেন নেই, সেটা নিয়ে কৌতুহল জন্মাল। আর জন্মাল বালিকার সবার মাঝখানে থাকা নিয়ে প্রশ্ন। আমি সাহস জমালাম। ভাবলাম, মার সামনে কি আর রাগ দেখাবে? খুব সাহস করে জোড়ে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলাম, কেমন আছ?
সে আমার চোখের দিকে চাইল। খুব রেগে থাকার সময়ে, কিংবা ভালোবাসায় সিক্ত সময়ের চাহনি তাঁর একদম একইরকম। দৃষ্টিতে তাই বোঝার কিছু নেই। তারপরে আমাকে যেন আরেকটু চমকে দিতেই মিষ্টি করে হাসল। এতটা মিষ্টি করে সে হাসে না তেমন। গম্ভীর মানুষ যে!। আমি আবারো অন্য কিছু জিজ্ঞেস করলাম। আবার মিষ্টি করে হাসল। কিন্তু মুখে টু শব্দটি নেই। বুঝলাম বিপদ কাটেনি এখনো। বলে ফেললাম, একটু বাইরে চলো। বড় আপার দিকে তাকিয়ে একটা ভদ্রতার হাসি দিয়ে আমার সাথে খুব শান্তভাবে বেরিয়ে এল। কিন্তু বিধিবাম! ঘর থেকে বেরুতেই মুখ ঝামটা দিয়ে সোজা লিফটে গিয়ে উঠল। আমি হা করে চেয়ে রইলাম। কেন মেঘ আসে, হৃদয়-আকাশে?

মাঠের মাঝখানে বিশাল এক পুকুর। আমি মাছ ধরেছি বড় একটা। মাছটার অধিকাংশ নীল। কেমন সুন্দর মায়াবি একটা মাছ, কিন্তু সেটাকে কেটেকুটে সবাই মিলে খেয়ে ফেলব! ভাইয়া অবশ্য ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। আমার খেতে ইচ্ছে হয়। আপাও বললেন চল খেয়ে ফেলি। বড় এক মাছ কাটা বটি আনলাম ঘর থেকে। আমি মাছ কুটছি আর বড় আপার সাথে গল্প জুড়েছি। দুনিয়ার সব গল্প রান্নাবান্নায় গিয়ে ঠেকছে। এর মধ্যেই মাছ কুটতে বিপত্তি বাঁধালাম। মাছের টুকরোর আকারগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। কোনটা অনেক বড়, কোনটা একদম ছোট। পেটির একটা টুকরো তো ট্রাপিজিয়াম! আমার লজ্জা হতে লাগল। ভীষণ লজ্জা। সে এসে দেখে কী বলবে? নিশ্চয়ই মুখ বাঁকা করে বলবে, মাছই কুটতে পারো না, আর সংসার সামলাবে কী! আপার সামনে এসব বললে কেমন করে মুখ গুঁজব?

লজ্জার মাত্রা প্রবল হতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি চোখ কচলালাম। বুঝলাম, মাছ কুটতে বিন্দু ভুলো করিনি। মাছই যে নেই! তবু লজ্জা গেল না। ভাবতে লাগলাম, এমন মাছ দেখলে সে কিইনা বলে!

বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬

চিরন্তন



শুরুর আগে

কাল সিঁড়ি দিয়ে শব্দ তুলে উঠছিলাম, দোতলার দরজা খুলে গেল। অন্তরা বলল, একটু দাঁড়ান। একটা লাল রঙয়ের ডায়েরি এনে বলল, আপনার ব্লগে দিবেন। আমি ডায়েরিটা নিয়ে উপরে চলে এলাম। এক বসায় ওর এই দেড় মাসের স্মৃতিকথা পড়লাম। আমরা এই বাড়িতে ওঠার পর থেকে ওর সাথে প্রেম হওয়া পর্যন্ত। কোথাও কোথাও অনেক কাটাকাটি করা হয়েছে, কোন পৃষ্ঠা একদম নতুন করে লেখা হয়েছে। লেখার ধাঁচটা অনেকটা আমার মত। সন্ধ্যায় ক্লাশ করে এসে ডায়েরিটা পেয়েছি। রাতে পড়া ছিল, তাই আজ দুপুরে সবটা টাইপ করলাম। চিরন্তন শব্দটার ফরাসি অর্থ হল 'ন হন্যতে'। ডায়েরির প্রথম পাতার ওপরে ফরাসি শব্দ দুটো অন্তরাই লিখেছে
ওর বাবা-মা এই লেখা পড়বেন। আপনাদের মেয়ে অকালপক্ক হবার পেছনে আমার দায়টুকু স্বীকার করছি, এবং দেবতাসম মানুষ দুজনের কাছে ক্ষমা চাইছি। আজ থেকে দোতলা থেকে উঠবার সময় লজ্জায় হয়ত প্রার্থনা করতে করতে উঠব, আপনাদের সামনে যেন না পড়তে হয়। 
সপ্তাহখানেক বয়স হয়েছে যে প্রেমেরে, সে প্রেমে সবচেয়ে সুন্দর মূহুর্ত কোনটা? অন্তরা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, "আপনি এমন বিশ্রী করে শব্দ তুলে সিঁড়ি দিয়ে উঠেন কেন?"
ওমর ফারুক
২০ জুলাই ২০১৬।

এক.
আমাদের বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। সাততলা দুমাস ধরে খালি ছিল, সেখানে। আসলে বাড়িটা আমাদের না। আমরাও এ বাড়িতে ভাড়াটিয়া। আমার নাম অন্তরা, ক্লাস সেভেনে পড়ি আজিমপুর ইশকুলে। নাজিমউদ্দিন রোড জায়গাটা পুরান ঢাকা হয়েও সেরকম ঘিঞ্জি না। যেন পুরান ঢাকার উপনিবেশ। তবে বাড়িগুলো খুব কাছাকাছি, ছোট ছোট। আমার বাবা ঢাকা কলেজে বাংলা পড়ান। মা যায়যায়দিন পত্রিকার ফিচার 'নন্দিনী'তে কাজ করেন। আমরা থাকি দোতলায়। বাড়িটা সাততলা। গত দুটি মাসেরই এক তারিখ আমি অপেক্ষা করেছি, নতুন কেউ আসছে কিনা এ বাড়িতে। আসেনি। কিন্তু আজ এল। যখন জিনিসপত্র নিয়ে বিস্তর টানাটানি চলছে, তখন বোঝার উপায় নেই কারা আসল ভাড়াটিয়া। তাই সব শান্ত হওয়ার অপেক্ষা করি। এ বাড়িতে আমার বয়সী কিংবা আমার বন্ধু কেউ নেই। তাই আমার এত আগ্রহ আগন্তুক পরিবারের প্রতি। যেহেতু আমি কোন প্রাইভেট পড়ি না, তাই আমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ মেলে শুধু ইশকুলে যেতে। আর ফি শুক্রবার বিকেলে শিশু একাডেমিতে নাচ শিখতে যেতে পারি।

আমি যেমন চঞ্চল চোখে সিঁড়িতে চোখ রাখছিলাম এ বাড়ির নতুন বাসিন্দাদের প্রতি, তেমনি মাও চোখ রাখছিলেন। আমার বয়স তের

শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১৬

MANSLATER: যন্ত্রটা আমার যেজন্য প্রয়োজন ছিল

photo: central films

বাংলা ভাষা বড্ড জটিল, আসলে মানুষের ভাষাটাই অমন। একটা ভারী বোঝার মত লাগে আজকাল কাউকে বোঝার চেষ্টাটাকে। একটা যন্ত্রের কথা দেখলাম ইউটিউবে। নারী আচরণ নিয়ে বিভ্রান্ত যারা, তাদের জন্য যন্ত্রটা। ভিডিওটাতে যন্ত্রটা নারীদের যে কোন বাক্যের ঠিক ঠিক অর্থটা দেখিয়ে দেয়। আর আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি, অমন যন্ত্র যদি সত্যি থাকত!
না বুঝবার সমস্যাটা আমার সেই জন্ম থেকে। মার হাসির পেছনের কষ্টটা বুঝিনা, বোনের রাগ বুঝিনা, সিনেমার নায়িকার সংলাপগুলোও দূর্বোধ্য লাগে।

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

রোদ্দুর

ছবি সৌজন্যঃ 123rf

প্রখর রোদ্দুর। ওদিকটায় কয়েকটা জারুল গাছ। হৈমন্তির হলুদ জামা রোদের কবলে পরে চোখেমুখে স্নিগ্ধ আভা ছড়াচ্ছে। ঝড় সেখানে খানিকটা মন দিয়ে বলল, পশ্চিম কোনদিক বলতে পারো?
-জানিনা।
-উফ! ভেবে দেখো!
-ঐ যে ঐদিকটা, জারুল গাছের দিকটা।
ঝড় উত্তর দিকে তাকালো। মাথার ওপর সূর্য। তার খানিকটা ডান দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল, এক্ষণ ঐ যে ঐখানটায় প্রজাপতি তারা আছে। সে এড়িয়ে গেল, গ্রীষ্মে কল্পনায় সে এই রোদেই প্রজাপতি তারাটাকে প্রতিদিন দেখে। হৈমন্তি মাথা ঝাকালো। তার চোখে খানিকটা উচ্ছাস কয়েক মূহুর্তের জন্য খেলা করেই হারিয়ে গেল। যেন প্রজাপতি তারাটা যেখানেই থাকুক, যায় আসেনা কিছু। অথচ তার যায় আসে। তার নিজেকে প্রজাপতির জায়গায় কল্পনা করতে ভীষণ ভালো লাগে। স্রষ্টা প্রজাপতি না, অসম্ভব সুন্দর নামের ঐ তারাটার জায়গায়। কয়েক মূহুর্ত পর সে চোখের কোনা দিয়ে আকাশের জায়গাটা দেখতে চেষ্টা করে। যেন মেঘে ঢেকে গেছে অল্পের জন্য, একটু ভালোভাবে তাকালেই দেখতে পাবে।

উচ্ছাস দেখানো তার সাজে না। সে ঝড়কে ফেলে এসেছে দুবছর আগে। এখনো ব্যাপারটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা হয়নি। হঠাৎ দেখা হয়, স্মৃতিচারণ হয়, হৈমন্তি চুপ করে শুনে যায়। অত্যন্ত শক্ত মেয়ে হওয়ায় চুপ করে নিস্পৃহতা দেখিয়ে যায়। নিস্পৃহতা পছন্দ তার।

নিরবতা ভাঙ্গে ঝড়। যে বিষয় নিয়ে কথা বলা নিষেধ, সেটাই তুলে আনে।
-ডাক্তার কী বলল কাল?
-যা বলে সবসময়।
-নতুন কিচ্ছুনা? উন্নতি, অবনতি।
-নাহ! 
ভয়ংকর একটা অসুখ হয়েছে হৈমন্তির। সেটা সবাই ভুলে থাকতে চায়। তবু হঠাৎ মা, বাবা, পিসি ভুল করে সেটার কথা মনে করিয়ে বসে। তারপর আড়ালে গিয়ে চোখের পানি লুকোয়। ঝড় সাবলিলভাবে মাঝে মাঝেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। যেন একটা অধিকার।

অসুখ হয়েছে বলে বৈরাগি হয়ে হৈমন্তি ঝড়কে ছেড়ে এসেছে এমন না। বিচ্ছেদ দুবছর আগে, আর অসুখটা হৈমন্তি বুঝতে পারে বছরখানেক আগে। তারপর ডাক্তার-ডাক্তার খেলা চলে দুমাস। একদিন মলিন স্বরে জানিয়ে দেয়, রোগটা কর্কট। পরিবারের চিত্রটা হঠাৎ করে বদলে যায়। সবাই এমনভাবে যত্ন করতে শুরু করে, যেন মেয়ে পরের জন্মের পথে পাড়ি জমাচ্ছে সপ্তাহান্তেই। ঝড় সেই আগের হৈমন্তিকে আগের মত দেখে আসছে, সব জেনেশুনেও তার তাই আগের ব্যবহারটা চালিয়ে যেতে ভালো লাগে।

হঠাৎ করে মলিন হয়ে যায় ঝড়ের মুখ। বলে, "ঐ তারাটা যদি শিগগিরই খসে পরে?"
চমকে তাকায় হৈমন্তি। মলিন মুখটা দেখে বুঝে ফেলে প্রজাপতি তারা খসে পরবার অর্থ। তাকেই তো আদর করে প্রজাপতি ডাকত ঝড়। বলে,
-লুকোচ্ছিলাম কিছু একটা।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় ঝড়।
-অসুখটা না আর ছড়াচ্ছে না! ডাক্তার বলেছে ক্রায়োসার্জারি করলেই সেড়ে উঠব।

তারপর টুপ করে আনন্দ যেন ছড়িয়ে পরে হৈমন্তির মুখে। মিথ্যে সে কক্ষনো বলেনি, তাই অবিশ্বাস করতে পারেনা ঝড়। আর চোখের প্রজ্জ্বলতা তাকে মূহুর্তে বিশ্বাস করিয়ে দেয়। ব্যাগ থেকে কাগজ বেরোয় হৈমন্তির। ক্রায়োসার্জারির তারিখ আছে তাতে। হৈমন্তির হাসিটাকে এবার অবিশ্বাস করাবে কে? রোদটাকে মিষ্টি লাগতে শুরু করে ঝড়ের। যেন হৈমন্তি মাত্র বলল,  "আমি তোমাকে আবার ভালোবাসব ঝড়!"

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

অবলা


-"এই যে শুনেন!"
রহিমউদ্দিন বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গ্রামের ছোট্ট বাজারটায় তার একটা চায়ের দোকান আছে। টিনের ঘর, সামনে দুইটা বেঞ্চি পাতা। মহাজনেরা আড়ৎ বন্ধ করে এসে বসে আয়েশ করে লাল চায়ে ভিজিয়ে বিস্কুট খায় তার দোকানে। সেই টং খুলতে যাবার জন্য সকালে পান্তা খেয়ে বের হবার সময় তার বিবি মোসাম্মাৎ আয়েশা বেগমের কোমল কণ্ঠ। রহিমউদ্দিন তাকায়, বিরক্তিভরে।
-কও।
-বাজারে নতুন কাকরোল উঠছে, আমার জন্যে আনবেন একটু?
-মনে থাকলে আনমুনে।
বলেই বেরিয়ে যায় রহিমউদ্দিন। বউ তার পোয়াতি, আট মাস চলে।

রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬

আলাভোলা উড়নচণ্ডী


এক.
আমরা প্রেম করতাম আরো বিশ বছর আগে, আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে সেই বিশ বছর আগেই। প্রেমের আগে বন্ধুত্ব ছিল এক বছর, প্রেম ছিল চার-পাঁচ মাস। এবং প্রেমের পরে বন্ধুত্ব ছিল কয়েক বছর। তার হিসেব নেই।  যেদিন অনুরাধা আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন চৈত্র মাস ছিল, এটুকু মনে আছে। সালটা ছিয়ানব্বই। আমার খুব একটা খারাপ লাগছিল বলবনা। কারন নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম তার আগেই। আর অনুরাধা ঝরঝর করে কাঁদছিল। মেয়েদেরকে ইশ্বর এ পৃথিবীতে কাঁদতে পাঠিয়েছেন কিনা কে জানে! যেদিন আমাদের প্রেম হয়, সেদিনও তো ও কেঁদেছিল। অবশ্য সে কান্না হয়তবা ছিল হারানোর ভয়ের। সেই অল্প কয়দিনের প্রেম ছিল একদম দায়সারা রকমের। এই ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসার কথা বলা, আর দুয়েকটা চিঠি দেয়া। আর একদিন আনন্দতে দেখতে গিয়েছিলাম একটা সিনেমা। সালমান শাহের মহামিলন। ববিতা ছিল সিনেমায়। অনুরাধা ছিল সালমান শাহের পোকা। ওর দিদির সাথে প্রায়ই হলে যেত সালমান শাহের মুভি দেখতে। সেসময় নায়ক বলতে আমরা একজনকেই চিনতাম। আমি আলাভোলা মানুষ, মুভি দেখবার কথা তেমন মনে আসত না। শুক্রবার যখন বাড়ির সবাই বই দেখতে বসত বারান্দায় টিভিটা এনে, আমি তখন ওপরতলায় পুরনো ম্যাগাজিন নিয়ে হাই তুলতাম। শুক্রবারের সকাল-দুপুর-বিকেল পুরোটাই ছিল হাই তোলার।

বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

মস্তিষ্ক

সে একটা উপহার পেল। তাতে মোড়কে মোড়ানো ছিল কসাইখানা থেকে কিনে আনা একটা ছাগলের মস্তিষ্ক। সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট। তাতে লেখা-
"ছাগলের মস্তিষ্ক নানা কাজে লাগে। এই ধরুন খাওয়া, কিংবা স্বল্পবুদ্ধি মস্তিষ্কের রিপ্লেসমেন্ট।"

সোমবার, ২ মে, ২০১৬

কুলাঙ্গার

বুড়োর নাম  তোরাব আলি। হাড় জিরজিরে, মাথায় কদম ছাট সফেদ চুল, থুতনিটা যেন দুপাশ থেকে চেপে বসেছে চোয়াল ঢেকে। চোখে সে তেজ নেই আর। নিমতলির একটা পুরনো যন্ত্রের দোকানে একের পর ইলক্ট্রনিক্স যন্ত্র ভেঙ্গে যাচ্ছে। সকাল নয়টায় বসে, একটানা রাত নয়টা পর্যন্ত চলে ও কাজ। কাজটা খুব সোজা। ঘড়ি, কম্পুটার, ভিসিআর, টিভি আর নানারকম যন্ত্রপাতি  কেজি দরে কিনে আনে দোকানের মালিক আকবর মিঞার ছোট শালা এহতেশাম। সেগুলো থেকে প্রয়োজনিয় জিনিস ভেঙ্গে বের করা। এই মহল্লায় এই কাজটা চলে বহুত। ঠুক ঠুক আওয়াজ শোনা যায় সকাল-সন্ধ্যা। একটু বিরাম নেই।  ১৭ বছর হল আকবর মিঞার এই দোকানে কাজ জুটেছে। ঈদ-মহররম ছাড়া তেমন দিন যায়নি অলস।

দেশ স্বাধিন হবার সময় বুড়োর বয়স আঠারো। না ঐ মিলিটারির জুলুমের কথা না, তারো আগে দেশ স্বাধিন হয়। সাহেবরা হঠাৎ একদিন সব গুটিয়ে নিজ মহলে ফেরে। ভারত ভেঙ্গে দু-টুকরো। পাকিস্তান নাম নেয় দেশ।

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬

বৈরাগীর সংসার

ছেলেটা চিঠিতে লিখল, "আজ প্রথমবারের মত মনে হল, আমি হয়তবা পারবনা | আমার যে বৈরাগ্যের প্রতি টান, তা ভাল করে উপলদ্ধি করছি| এমনও হতে পারে জীবনে একলাই থাকলাম। জীবনটা শুধু নিজেকে নিয়ে নিজের মত করে কাটাতেও পারি।
ভয় হয়, একদিন মন উঠে যাবে| আবার কারো প্রতি লম্বা সময়ের জন্য মন বসাতে পারব না। কিন্তু এমন কদিনের মোহ, কদিনের মোহ দিয়ে তো জীবন চলবেনা। সমাজ মানবেনা, মানুষ কষ্ট পাবে। তাই হয়তবা বৈরাগ্যের জীবনই সই। জানিনা আমি।"

মেয়েটা উত্তরে লিখল, "জানো বৈরাগ্যের প্রতি টান আমারো আছে| চল দুজনে মিলে বৈরাগী হই। বৈরাগী জীবন কাটাবো একসাথে। বৈরাগী সংসার !"

রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬

যেভাবে কখনো ঢাকা ঘুরিনি

ছবিঃ BANGLADESH: discover today, think tomorrow

নানা জায়গায় বেড়াতে যাই প্রচুর। আর ঢাকার ধুলাবালির মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই ঘুরতে হয়। কখনো কাজে, কখনো বাধ্য হয়ে, আর কখনোবা সাধে। যখন সাধে ঘুরি, তখনকার সময়গুলোকে এককথায় 'অসাধারন' বলতে আমি পারিনা কখনোই। হয়তবা কিছু সময়কে অনেক সময় ভালো বলি, কখনো সুন্দর বলি। কিন্তু সত্যি ঘুরে বেড়াবার আনন্দটুকু সেখানে অতটা থাকেনা।

আজকের দিনটা ছিল নিছক ঘুরে বেড়ানোর। আমরা হেঁটে বেড়িয়েছি যেমন ইচ্ছে তেমন করে।

শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৬

স্বরলিপি আহমেদ

ছবি : আকাশ      মডেল : সামিয়া
স্বরলিপি আহমেদ নাম থেকে আশির দশকে যে চিঠিগুলো আসত আমার কাছে, সেগুলোর লেখার ভঙ্গি ছিল চমৎকার। আমি সবেমাত্র অনার্স শুরু করেছি। থাকি ঠাকুরদার আমলের পুরনো একটা বাড়িতে, মগবাজারে। আমার ছোট বোনটা তখনো ইশকুলে পড়ে। বোধকরি তখন ব্যাপারটা শুরু। আমাদের বাড়িতে সবার প্রচুর চিঠি আসত, তাই ছোট পরিবার হলেও কেউ কারো চিঠির দিকে তাকাতো না। তবে ছোট বোন চিত্রাকে পরের দিকটায় প্রায়ই এক কিংবা দুই টাকা করে দিতে হয়েছে চিঠি উদ্ধার করতে। যে সময়টায় ডাকপিওন আসত, তখন আমি বাড়িতে থাকতাম খুব কমই। চিঠিগুলো যেত চিত্রার কবলে, এবং সে থেকেই এই ঘুষ-প্রথা আমাদের বাড়িতে ঢোকে।

প্রথম যেদিন চিঠিটা আসে, সেদিন আমি বাড়িতে ছিলাম। চিঠিটা আনমনে খুলি এবং 'প্রিয় প্রত্যুষ' সম্বোধন দেখে কেমন চমকে যাই।

শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

একটি দুঃখী বাঘের আত্মকাহিনী

গল্পের পেছনের কথা

তখন আমি বেশ ছোট। ক্লাস সেভেনে পড়ি। একটু একটু লিখতে পারি, আর শত শত বই পড়ি। আমার ঘুমের জন্য, পড়ার জন্য যত সময় আছে, তার অনেকখানি দেই বই পড়াতে। গল্পের বই। সেই ছোট সময়ে, আমি লিখলাম গল্পটা। ছোট থাকার আনন্দটা বুঝতে পারছি গল্পটা এখন পড়ে। কল্পনা করা যায়, এবং সে কল্পনাকে অনুভব করা যায়। এখন সে জগৎ হারিয়ে গেছে। আমাকে বলুন এমন একটা লেখা লিখতে, আমি পারবনা।

অলংকরণটা  সম্ভবত মাসুক হেলালের করা।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬

পৃথিবীটা কমলালেবুর মত গোল

তুমি আমাকে ভুল বুঝলে, ভীষণ লজ্জায় আমি পালিয়ে যেতে চাই। কখনো আর মুখ দেখাতে চাই না। তা আমি পারব কেমন করে? পৃথিবীটা যে গোল! ঘুরেফিরে আবার তোমার সামনে আমি পড়বই! তোমাকে আবার আমার মুখ দেখাতে হবে। হু, এ পৃথিবীতে এখন আর পালিয়ে যাওয়া যায়না।

পৃথিবীটা যদি হত থালার মত চ্যাপ্টা, তবে তুমি যেপথে হাঁটছ, উল্টোদিকে চললাম, আর দেখা হবেনা। একদিন চ্যাপ্টাই ছিল, তখন পালিয়ে বাঁচা যেত। কিন্তু এখন আর নেই যে সে দিন! বারবার মুখোমুখি হতে হবে।

অপ্রাসঙ্গিক শুরুটা থাকুক। 'অশিক্ষিত' লোকজন আমার একদম অসহ্য লাগে। গা জ্বলে বলা যায়। কিছু মানুষ আছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও শিক্ষিত মন নিয়ে বেঁচে আছেন। আমি তাঁদের কথা বলছিনা। ডায়েরিতে দেখলাম, 'অসহ্য লাগে অশিক্ষিত মানুষদের'- কথাটা খুব সুন্দর করে লেখা। কবে কী কারনে লিখেছিলাম, ভুলে গেছি এতদিনে। তবে অসহ্য এখনো লাগে, লেগে যাবে।

সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬

শহর আর শহরতলীতে বাস এবং বিকারগ্রস্থ আমরা যেমন

একটা গল্প দিয়ে শুরু।
মিরপুর দশের মোড় থেকে একটু ডান দিকে। রাস্তার মাঝখানে একটা জটলা, একটা হিউম্যান হলার (ম্যাক্সি) রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করানো। ভীড়টা তার সামনেই। এগিয়ে দেখি, একটা রিকশা উল্টে আছে তার মধ্যে ফেলে হিউম্যান হলারের চালককে পিটাচ্ছে অনেকগুলো মানুষ (?)। প্রায়ই এসব দেখি, তাই ভ্রুক্ষেপ না করে এগিয়ে যেতে গিয়েই ধাক্কাটা খেলাম। ভীড়ের পাশেই রাস্তায় পরে আছে রিকশাচালক, যাকে ধাক্কা দেয়ার অপরাধে গণপিটুনি জুটছে হিউম্যান হলার চালকের কপালে। প্রায় বদ্ধ উন্মাদের মত করে মারছে লোকটাকে 'গণমানুষ'। আর সেই রিকশাচালক রাস্তায় আহত হয়ে পরে আছে, শরীরের অনেক জায়গায় ছিলে গেছে।

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

দুঃখটা যখন অনেক বড়





হঠাৎ করে দেখলাম আমার ব্লগের সব লেখা হারিয়ে গেছে। একদম সব!

আমি কিছুক্ষণ স্তদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম এবং কান্না চেপে গেলাম। এ কয়দিনের লেখাগুলো আর নেই ইন্টারনেটে! আমি ভাবছিলাম দুঃখটুকু সওয়া সম্ভব না। অনেক লেখারই ব্যাকআপ নেই কম্পিউটারে কিংবা অন্য কোন ওয়েবসাইটে।

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১৬

Stargazer's Diary

জাহজের নাবিকদের মত তারা দেখতে গেলে একটা লগবুক লাগে। সেখানে হিসাব রাখতে হয় কবে কোন তারাটা কোথায় উঠল, কোনটা ডুবল। আমার লগবুক পাওয়া যাবে এখানে। পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করতে নীচের লিংকে ক্লিক করতে হবে।

Stargazer's Diary


ভূমিকা



আমার সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে যখন আমি তারা দেখি রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হয় সৌন্দর্যে ভরপুর একটা আকাশ, এবং যেখানে কোন মন খারাপ নেই আমি এখন অবাক হয়ে দেখি, আকাশের সব তারাকে আমি চিনি, সবাই যেন আমার প্রতিবেশি, কিংবা বন্ধু! শহুরে আলোয় যে তারাগুলো দেখা যায়না, তাদের যেখানটায় থাকার কথা, সেখানে তাকিয়ে ভাবি, একটা টেলিস্কোপ থাকলে নিশ্চয়ই তারাটা দেখতে পেতাম ঠিক ওখানটায়

প্রথম দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম সপ্তর্ষীর দিকে তাকিয়ে পরে যখন পুরো আকাশটাকে চিনলাম, তখন মনে হল, ছেলেবেলায় কেন শিখিনি তারা দেখা? কালপুরুষ পৃথিবীর সব নক্ষত্রপিয়াসুর মনেই আগ্রহ জাগায়। আমি তাই কালপুরুষও দেখেছি অনেক। কৃত্তিকা যেদিন প্রথম দেখি, চেচিয়ে উঠেছিলাম আনন্দে! এখন আকাশটাকে খুব ভালো চিনি, তাই আকর্ষণটাও বাড়ছে। একসময় মনে হত, পুরো আকাশটা চিনলে পানসে লাগবে। কিন্তু উল্টো হল। ভালবাসা বাড়ছে। তারা দেখা শিখতে গিয়ে আমাকে সবসময় নাবিকের মত লগবুকে সব টুকে রাখতে হয়ছে। এই সেই লগবুক। এখানে আছে কয়েকমাসের তারা দেখার যত হিসাব।

স্বপ্ন দেখি, কোন একদিন উত্তর মেরুতে যাব। ঠিক উত্তরের বিন্দুটায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখব, যেখানে মাথার ওপরে ধ্রুবতারা থাকে, আর অন্যরা তাকে ঘিরে ঘোরে। এই মূহুর্তটার জন্য আমি বাঁচতে চাই।

তারা নিয়ে গল্প করতে এবং অন্যকে তারা দেখা শেখাতে আমার ভাল লাগে। বড় ভাল লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ইশ! পৃথিবীর সব মানুষ যদি তারা চিনত!

ওমর ফারুক
১৫ মার্চ, ২০১৬