রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬

আলাভোলা উড়নচণ্ডী


এক.
আমরা প্রেম করতাম আরো বিশ বছর আগে, আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে সেই বিশ বছর আগেই। প্রেমের আগে বন্ধুত্ব ছিল এক বছর, প্রেম ছিল চার-পাঁচ মাস। এবং প্রেমের পরে বন্ধুত্ব ছিল কয়েক বছর। তার হিসেব নেই।  যেদিন অনুরাধা আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন চৈত্র মাস ছিল, এটুকু মনে আছে। সালটা ছিয়ানব্বই। আমার খুব একটা খারাপ লাগছিল বলবনা। কারন নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম তার আগেই। আর অনুরাধা ঝরঝর করে কাঁদছিল। মেয়েদেরকে ইশ্বর এ পৃথিবীতে কাঁদতে পাঠিয়েছেন কিনা কে জানে! যেদিন আমাদের প্রেম হয়, সেদিনও তো ও কেঁদেছিল। অবশ্য সে কান্না হয়তবা ছিল হারানোর ভয়ের। সেই অল্প কয়দিনের প্রেম ছিল একদম দায়সারা রকমের। এই ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসার কথা বলা, আর দুয়েকটা চিঠি দেয়া। আর একদিন আনন্দতে দেখতে গিয়েছিলাম একটা সিনেমা। সালমান শাহের মহামিলন। ববিতা ছিল সিনেমায়। অনুরাধা ছিল সালমান শাহের পোকা। ওর দিদির সাথে প্রায়ই হলে যেত সালমান শাহের মুভি দেখতে। সেসময় নায়ক বলতে আমরা একজনকেই চিনতাম। আমি আলাভোলা মানুষ, মুভি দেখবার কথা তেমন মনে আসত না। শুক্রবার যখন বাড়ির সবাই বই দেখতে বসত বারান্দায় টিভিটা এনে, আমি তখন ওপরতলায় পুরনো ম্যাগাজিন নিয়ে হাই তুলতাম। শুক্রবারের সকাল-দুপুর-বিকেল পুরোটাই ছিল হাই তোলার।
আলাভোলা মানুষ প্রেমিক হিসেবে ভালো, কিন্তু সংসার করতে বনিক চাই। বণিকের পয়সা না থাকুক, জীবনের দেনা-পাওনার হিসেব কষবার পাঁকা বুদ্ধি চাই। জীবনের খেলায় মানুষ ঠকিয়ে দিতে পারবে, এমন বণিকের ঘাড়ে ঝুলে অনুরাধা চায়নি নিজের জীবনটা অস্থির করতে। তাই একদিন আসতালা ভিসতা বলে চোখের জলে দেবালয় ভিজিয়ে নিজের পথ ধরেছিল।

আমি বলেছিলাম, "তুমি হয়তবা ভুল করছ"। বিশ্বাস করেছিল ও ভুল করছে। কিন্তু ব্রহ্মা প্রজাপতির দোহাই দিয়ে তার ভাগ্যে যে আছে তার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করল। আমি ঝাপসা চোখে চেয়ে রইলাম কয়েকটা দিন।

দুই.
আলাভোলা ছেলে, যে কলেজ ম্যাগাজিনে কবিতা লিখেই শুধু ললনাদের চোখে পড়তে পারে, তার ভাগ্যে তেমন কিছু থাকেনা। ঐ কবিতা পড়েও ক্লাশের মেয়েরা আসত শুধু চিঠি লিখিয়ে নিতে। অবশ্য বেনসন এন্ড হেজেসের বদলে গাদা গাদা চিঠি লিখে দিতে আমার তেমন আপত্তি ছিলনা সেকালে। আমার বাবা বড় জ্যোতিষী ছিলেন, আমারও সামুদ্রিক শাস্ত্রটা ভালো আয়ত্তে ছিল। হাত দেখে পয়সা নিতে পারতাম না, তবে বিড়ির প্রতি প্রবল টান ছিল তা সবাই জানত। আর মাঝে মাঝে নীলক্ষেত থেকে কেনা ছেড়াখোড়া সুনীলের বই পেতাম। আমি সালমান শাহের কপালের ভাঁজ না চিনলেও নীরার হাত খুব চিনতাম, যে হাত ধরলে আর পাপ করা যায়না। শাকুনিবিদ্যাও ভালো জানতাম, কাকের যে পাঁচটা জাত আছে তা শুনিয়ে বড্ড অবাক করে দিতে পারতাম মেয়েদের। সকালে কোন জাতের কাক দেখে কলেজে এসেছে, তা নিয়ে বড় বড় গল্প ফাঁদতে পারতাম বোকাসোকা মেয়েগুলোর কাছে। ডাহা মিথ্যুক ছিলাম তখন।
সাদা পাঞ্জাবি গায়ে, ভূসি মাল কিছু কাব্য বেরোয় দৈনিকে, আর বড় বড় উস্কোখুস্কো চুল আছে, এমন ছেলেদের ক্লাশে আলাদা একটা দাম থাকে। কলেজে, য়ূনুভার্সিটিতে সে দাম আমি ঠিক পেয়েছি। সবাই খাতির জমাতে আসত। আর ভয়ংকর সুন্দরী কোন এক মেয়ে প্রেমে পরে যেত, সেটা সেকালের নিয়ম ছিল। একদিন গাড়ি হাঁকিয়ে এসে হঠাৎ কষে ব্রেক করে বলত, গাড়িতে উঠে এসো। সেই গল্প আমারও ছিল। কিন্তু আমি সেই গাড়িতে উঠে না যেয়ে সেদিন বলেছিলাম, দিদির বাড়িতে যেতে হবে। নিয়ম ভেঙ্গে আমি ক্লাশের সবচেয়ে সুন্দরীর গাড়িতে না চড়ে অনুরাধাকে চিঠি লিখলাম একদিন। ছোট্ট রুলটানা কাগজের একপিঠে লেখা চিঠি। তার আগে থেকেই দুজনেই দূর্বল ছিলাম মনে হয়। কিন্তু যাদের বাড়িতে আদরের তুলতুলে কুকুরছানা নাই, ডুপ্লেক্স বাড়িতে প্রতিদিন খাবার সময় এলে কাজের মহিলা এসে বলেনা, "আপা খেতে আসেন", তাদের জীবনে অনেক যুদ্ধ থাকে।  আলাভোলা ছেলের সাথে তাদেরকে মানায় না। কারন তাদের জীবন নিয়ে ভাবতে শেখা আছে। তবু হাজারটা ভয় নিয়ে অনুরাধা সতের পৃষ্ঠার একটা চিঠি লিখে পরদিন আমাকে দিয়েছিল। সাথে চোখের জলে ধুয়েমুছে গিয়েছিল ওর চোখের কাজল।

কয়েকমাসের প্রেমে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় কথা বলেছি বিচ্ছেদ নিয়ে, তারপরে সুনীলের কবিতা। সেই বিচ্ছেদ যেদিন হয়, সেদিন আমরা রমনা পার্কের একটা কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করেছিলাম। সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটা এখন অনেক বড় হয়েছে। এখনো গেলে মাঝে মাঝে গাছটার তলায় দাঁড়াই।

তিন.
জীবনযুদ্ধে যাদের কোন বীরত্ব নেই, তাদের অনেকে একলা জীবন কাটায়। সেটা অনেক সোজা বলে। আমিও একদিন অধ্যাপক রজ্জাকের জীবনাদর্শ নিয়ে একগাদা বই কিনতে শুরু করলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার প্রভাষক পদে ঢুকেছি আজ পনের বছর হল। এখনো প্রভাষকই আছি। প্রথম দিকে বাবার বাড়িটায় একটা ঘর তো ছিল। বাবা চিতায় ওঠার অনেক পরে মায়ের অসুখে বাড়িটা বেঁচতে হয়। আমার আর মায়ের জায়গা হয় বড় জামাইবাবুর দোতলা বাড়িতে। মা মারা যাবার সাতমাস পরে দিদি একদিন আলাদা ঘরে ডেকে বললেন, "অমিয়, অন্যখানে দেখবি নাকি? শ্বাশুড়ির খোঁচা শুনতে আর ভালো লাগেনা"। আমি অন্যখানে দেখি। সেই অন্যখানে উঠেছি বৈরাগি একটা জীবন নিয়ে। কলিগ, ছাত্র, আর বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা বইয়ে ঘরে পাহাড় গড়তে থাকি। আর বেতনও তো পেতাম কিছু। নীলক্ষেতের দোকানীরা আমার দামাদামিতে ছিল অভ্যস্ত, আমার স্বাদও জানত। পাঁচটাকার জন্য কত যে ফিরে এসেছি বই না কিনে!

চার.
এই এত বছর পর অনুরাধার সাথে দেখা। কি চঞ্চল একটা মেয়ে আছে ওর! কোলকাতায় এসেছিলাম ঘুরতে। কোলকাতা বইমেলা আমাদের ঢাকার মত হয়না। তবু বড় লেখকরা আসেন। আনন্দের স্টলে গেলাম সত্যজিৎ রায়ের দুয়েকটা সিনেমা নিয়ে বই আছে সেগুলো কিনতে। "মা আমাকে আজও যদি শঙ্কু না কিনে দাও তবে কাল..."- কণ্ঠটা শুনে ঝট করে পেছনে ঘুরলাম। যে মেয়েটা বলছে, তার মার দিকেই চোখ গেল প্রথমে। প্রজাপতি চেয়েছিলেন বলেই হয়ত একই সময়ে অনুরাধাও আমার দিকে চাইল। একদম সহজ করে জিজ্ঞেস করল, "কেমন আছ"? 
আমাদের দেখা নেই ওর বিয়ের পর থেকে। অনার্সটা শেষ করবার আগেই বিয়ে থা করে কলাকাতায় পাড়ি জমালো। সেই অজিত মুখুজ্যেকে আশেপাশে দেখলাম না। একলাই আছে। এতদিন পর দেখা হল, আমি অবাক চোখে চেয়ে রইলাম। আজকেও কাজল আছে চোখে। কয়েক সেকেন্ডের বেশি চেয়ে থাকা অসভ্যতা। মুখ নামিয়ে গুনগুন করে বললাম, "বেশ তো আছি"! অপরিচিত মুখ দেখে স্মিত হেসে আমার দিকে চাইল নাইন-টেনে পড়বে, এমন মেয়েটা। অনুরাধা মেয়ের দিকে চেয়ে বলল, "এলা, ইনি অমিয় ব্যানার্জি"। আজকালকার ছোকড়ারা প্রণাম করতে শিখেনি, হাত নেড়ে বলল, "হ্যালো!"

এলা আমার কথা বেশ জানে বোধহয়। কেমন অস্বস্তিতে পরে আবার বলে উঠল, "মা, আমি শীর্ষেন্দুর বই দেখি একটু?" বলেই ঝট করে কেটে পরল। অনুরাধা আবার বলল, "কেমন আছ"? আমি এবার বললাম, "ভালোই আছি"।

পাঁচ.
হাঁটতে হাঁটতে আমার গল্প শুনল সব। কোথায় আছি, কেমন আছি, লিখছি কিনা কবিতা-টবিতা এসব। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হাজারটা কথা জিজ্ঞেস করে গেল, আমি চুপচাপ বলে গেলাম। কোন এককালে ওকে বলেছিলাম, "আমি যখন নতুন প্রেম করব, সেসব গল্প নিশ্চয়ই শোনাবো তোমাকে"। কিন্তু ওটা শুনতে কোন সাবেক প্রেমিকারই ভালো লাগেনা, যদি সে ছেড়েও যায় এককালে। অনেকটা ম্লান স্বরে বলেই বসল, "এবার তবে প্রেমের গল্প শোনাও"। আমি শোনালাম একগাদা বইয়ের গল্প।

তারপর নিজের গল্প শুরু করল অনুরাধা। বিবাহিতা মেয়েদের গল্প শুরু হয় সংসার দিয়ে, শেষতক ওই সংসারের গল্প। এলার পাঁচ বছর হলে অশান্তির শুরু। জীবনযুদ্ধে পাঁকা খেলুড়ে ছিল অনুরাধার স্বামী। কিন্তু ব্যাবসায়ে টান পড়ে, সংসারেও যত্তসব ঝামেলার শুরু। এলাকে মানুষ করতে সংসার ছাড়ে অনুরাধা। কোর্ট-কাচারি করে বিচ্ছেদ। তারপরে কাজ করছে দৈনিক স্টেটম্যান এ। চৌরঙ্গির পত্রিকা হেড অফিসের কাছেই মাদার তেরেসা রোডে থাকে। রানি রাসমনি স্কুলে ক্লাশ নাইনে পড়ে এখন এলা। দাবায় খুব ভালো, আর সিতারও বাজায় খুব। 

হঠাৎ বললাম, "এলা তোমার ছেলেবেলার প্রেমের গল্প অনেক শুনেছে তাইনা?" 
-শুনেছে বৈকি।
-কেমন করে পালালো, দেখলে? 
-বড় পাকা হয়েছে। 

আমরা ফিরে এলাম আনন্দের স্টলে। একটা পিলারে হেলান দিয়ে মোবাইলে ঝুঁকে আছে এলা। আমাদের দেখে ফোনটা রাখল। মায়ের দিকে তাকিয়ে ফিচলে হাসি দিল। আজকালকার মেয়ে, কী যে হয়েছে! বুঝিনা বাপু! আমি ওর রঙ করা চুল এলো করে দিয়ে বললাম, "সেতার বাজাস বুঝি?"
-বাড়িতে চলুন, শোনাবোখন! 
-সেতার শুনতে মিঠাই নিয়ে যেতে হয় যে! চল দেখি! 
মিঠাই  কিনলাম বটে। হার্ডকভারে শঙ্কুর ছয়টা বই। মায়াই লাগল, পয়সাগুলো নীলক্ষেতে ঢাললে ভালো উসুল হত। এ দিয়ে শঙ্কুসমগ্র পুরোটা নীলক্ষেতে কয়েকবার কেনা যেত।

ছয়.
ঢাকা ফেরার আগে আরো দুবার দেখা হল। একটা বয়সের পরে মানুষের মনে মায়া ঢুকে বসে। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ভালোবাসতেই জীবনটা- এমন ভাব আসে মনে। আমি এলাকে এটা ওটা কিনে দিতেই ব্যাস্ত। কেপ্পন হিসেবে ছেলেবেলা থেকে ভালো পরিচিতি ছিল। এখনো তাই আছে। নীলক্ষেতের বুড়ো আমাকে বলে 'মিতব্যায়ী স্যার'। কিন্তু এলাকে বই, গানের আসল সিডি, মোবাইলের কাভার, একটা নীল শাড়ি আর মোবাইলে একগাদা পয়সা ভরে দিতে আমার বেশ লাগছিল। নিজের সংসার হয়নি, দিদির ছেলেমেয়ে নেই বলেই হয়ত মায়াটা বুঝিনি কোনদিন। আঁধার ঘরে বই পড়েই তো কেটে গেল অর্ধেকটা জীবন।
ঢাকা ফিরলাম, মন পরে রইল কোলকাতায়। দুবারে অনুরাধার সাথে কথা হয়েছিল খুব অল্প। সবসময় শুধু এলা। বলে এসেছি, "একবার ছুটি হলেই ওপারে চলে আসবি। অর্ধেক বাংলা ঘুরলে হবে? সব ঘোরাবো। আর রান্নাবান্না কিছু শিখিসনি, স্বামীর ঘর করবি কেমন করে? আমার কাছে আসিস, মরিচ বাটা শিখিয়ে দিব।" একটা টাচ মোবাইল আমার ছিল, কিন্তু ভাইবার  নামের যে সফটওয়্যার কেনার আদ্দিকাল থেকে ছিল, তার কাজ শিখলাম এলার কাছে প্রথম। দেশে এসে সারাদিন কুটকুট করে চ্যাট করতেও শিখে গেলাম।
আমার পড়াশুনা গোল্লায় উঠল। বই কেনা কমে গেল অল্প ক'দিনেই। পড়াটা নেমে এল অর্ধেকে। এখন বাংলা কাহিনীবিহীন মুভি দেখতে বলাকায় যাই, মাঝেসাঝে ভালোমন্দ খেতে পুরান ঢাকা, বিদেশি খাবারে মুখ রুচেনা তবু পিজা হাট। কলিগদের বাসায় ঢুঁ মারতেও শিখলাম হঠাৎ। টিএসসিতে আবৃত্তির ক্লাস নিতে জ্বালাচ্ছিল কয়েকটা ছাত্র, একদিন সেখানেও যাওয়া শুরু করলাম। ডিপার্টমেন্টে যখন পেঁয়াজের দাম বাড়া নিয়ে আড্ডা জমে, সে আড্ডায়ও বসতে শুরু করলাম পনের বছরের অধ্যাপনা জীবনে প্রথমবার। 

আর অনুরাধার মেয়েটার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, উপহার পাঠানো তো চললই!

সাত.
অনুরাধাকে বললাম একদিন কথায় কথায়, "মেয়েটাকে ঢাকা পাঠিয়ে দাও, নিজ দেশটায় বেড়ে উঠুক।" কিছু বললনা উত্তরে। হয়তবা আমার কথায় আরো অনেককিছু ধরে নেয়া যায়। অনুরাধা ধরে নিল। সপ্তাহান্তে চিঠি পেলাম, ডাকে পাঠানো। খুলে দেখি একতোড়া সাদা কাগজ। একটা একটা করে পাতা উল্টালাম, কিচ্ছু লেখা নেই। সতের পাতার সাদা চিঠিতে শেষ পাতায় শুধু লেখা-

ভুল করেছি বৈকি। এদ্দিনে শুধরে নেয়া যায়।
ইতি
অনুরাধা

আমি চিঠিটাকে আঁকড়ে ধরে বসে রইলাম অনেকটা সময়। অনুরাধা সেই বিচ্ছেদের বিশ বছর পরে আমার জীবনে ফিরে আসছে। কিন্তু আমি তো ওর বিরহে বৈরাগী হইনি। বৈরাগ্যের জীবনে আমাকে ভালো মানাবে বলে, সংসার্মে মন বসবেনা বলে আমি এনো একলা জীবন কাটাচ্ছি। হয়তবা অনুরাধা ভেবে আছে আমি ওর বিরহে দুঃখে কাটাচ্ছি। আসলে আমি তখন ছিলাম একটা আলাভোলা উড়নচণ্ডী। জীবনের যুদ্ধ-টুদ্ধ আমাকে নিয়ে সামলানো সম্ভব না বলেই অনুরাধা আমাকে ছেড়েছিল। সংসারধর্মে আলাভোলাই হয়ত বেশী কাজের। শাস্ত্রে আছে, 'বোকা মানুষ স্বামী হিসেবে ভালো'। অনুরাধা বণিক নিয়ে সুখি হতে পারেনি। তাই ছেলেবেলায় ফিরতে চাইছে, উড়নচণ্ডীর দ্বারে। 

কিন্তু আমি যে অনুরাধার মেয়েরই খপ্পরে পরে সংসারি হয়েছি। জীবনটাকে শিখেই গেছি! ক'দিন আগেও বুড়ো উড়নচণ্ডী ছিলাম, আজ নেই। এখন আমিও বণিক। তাই রুলটানা খাতার পাতায় একপিঠে লিখতে হল- 

আমিতো আর সেই অমিয় নেই। এখন আমিও জীবন চিনি। এখন আমাকে লিখলে ভুল শুধরাবে না, ভুলের পূনরাবৃত্তি হবে। তুমি বরং উড়নচণ্ডী খোঁজো।
ইতি
অমিয়

২টি মন্তব্য: