মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

রোদ্দুর

ছবি সৌজন্যঃ 123rf

প্রখর রোদ্দুর। ওদিকটায় কয়েকটা জারুল গাছ। হৈমন্তির হলুদ জামা রোদের কবলে পরে চোখেমুখে স্নিগ্ধ আভা ছড়াচ্ছে। ঝড় সেখানে খানিকটা মন দিয়ে বলল, পশ্চিম কোনদিক বলতে পারো?
-জানিনা।
-উফ! ভেবে দেখো!
-ঐ যে ঐদিকটা, জারুল গাছের দিকটা।
ঝড় উত্তর দিকে তাকালো। মাথার ওপর সূর্য। তার খানিকটা ডান দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল, এক্ষণ ঐ যে ঐখানটায় প্রজাপতি তারা আছে। সে এড়িয়ে গেল, গ্রীষ্মে কল্পনায় সে এই রোদেই প্রজাপতি তারাটাকে প্রতিদিন দেখে। হৈমন্তি মাথা ঝাকালো। তার চোখে খানিকটা উচ্ছাস কয়েক মূহুর্তের জন্য খেলা করেই হারিয়ে গেল। যেন প্রজাপতি তারাটা যেখানেই থাকুক, যায় আসেনা কিছু। অথচ তার যায় আসে। তার নিজেকে প্রজাপতির জায়গায় কল্পনা করতে ভীষণ ভালো লাগে। স্রষ্টা প্রজাপতি না, অসম্ভব সুন্দর নামের ঐ তারাটার জায়গায়। কয়েক মূহুর্ত পর সে চোখের কোনা দিয়ে আকাশের জায়গাটা দেখতে চেষ্টা করে। যেন মেঘে ঢেকে গেছে অল্পের জন্য, একটু ভালোভাবে তাকালেই দেখতে পাবে।

উচ্ছাস দেখানো তার সাজে না। সে ঝড়কে ফেলে এসেছে দুবছর আগে। এখনো ব্যাপারটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা হয়নি। হঠাৎ দেখা হয়, স্মৃতিচারণ হয়, হৈমন্তি চুপ করে শুনে যায়। অত্যন্ত শক্ত মেয়ে হওয়ায় চুপ করে নিস্পৃহতা দেখিয়ে যায়। নিস্পৃহতা পছন্দ তার।

নিরবতা ভাঙ্গে ঝড়। যে বিষয় নিয়ে কথা বলা নিষেধ, সেটাই তুলে আনে।
-ডাক্তার কী বলল কাল?
-যা বলে সবসময়।
-নতুন কিচ্ছুনা? উন্নতি, অবনতি।
-নাহ! 
ভয়ংকর একটা অসুখ হয়েছে হৈমন্তির। সেটা সবাই ভুলে থাকতে চায়। তবু হঠাৎ মা, বাবা, পিসি ভুল করে সেটার কথা মনে করিয়ে বসে। তারপর আড়ালে গিয়ে চোখের পানি লুকোয়। ঝড় সাবলিলভাবে মাঝে মাঝেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। যেন একটা অধিকার।

অসুখ হয়েছে বলে বৈরাগি হয়ে হৈমন্তি ঝড়কে ছেড়ে এসেছে এমন না। বিচ্ছেদ দুবছর আগে, আর অসুখটা হৈমন্তি বুঝতে পারে বছরখানেক আগে। তারপর ডাক্তার-ডাক্তার খেলা চলে দুমাস। একদিন মলিন স্বরে জানিয়ে দেয়, রোগটা কর্কট। পরিবারের চিত্রটা হঠাৎ করে বদলে যায়। সবাই এমনভাবে যত্ন করতে শুরু করে, যেন মেয়ে পরের জন্মের পথে পাড়ি জমাচ্ছে সপ্তাহান্তেই। ঝড় সেই আগের হৈমন্তিকে আগের মত দেখে আসছে, সব জেনেশুনেও তার তাই আগের ব্যবহারটা চালিয়ে যেতে ভালো লাগে।

হঠাৎ করে মলিন হয়ে যায় ঝড়ের মুখ। বলে, "ঐ তারাটা যদি শিগগিরই খসে পরে?"
চমকে তাকায় হৈমন্তি। মলিন মুখটা দেখে বুঝে ফেলে প্রজাপতি তারা খসে পরবার অর্থ। তাকেই তো আদর করে প্রজাপতি ডাকত ঝড়। বলে,
-লুকোচ্ছিলাম কিছু একটা।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় ঝড়।
-অসুখটা না আর ছড়াচ্ছে না! ডাক্তার বলেছে ক্রায়োসার্জারি করলেই সেড়ে উঠব।

তারপর টুপ করে আনন্দ যেন ছড়িয়ে পরে হৈমন্তির মুখে। মিথ্যে সে কক্ষনো বলেনি, তাই অবিশ্বাস করতে পারেনা ঝড়। আর চোখের প্রজ্জ্বলতা তাকে মূহুর্তে বিশ্বাস করিয়ে দেয়। ব্যাগ থেকে কাগজ বেরোয় হৈমন্তির। ক্রায়োসার্জারির তারিখ আছে তাতে। হৈমন্তির হাসিটাকে এবার অবিশ্বাস করাবে কে? রোদটাকে মিষ্টি লাগতে শুরু করে ঝড়ের। যেন হৈমন্তি মাত্র বলল,  "আমি তোমাকে আবার ভালোবাসব ঝড়!"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন