শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১৬

MANSLATER: যন্ত্রটা আমার যেজন্য প্রয়োজন ছিল

photo: central films

বাংলা ভাষা বড্ড জটিল, আসলে মানুষের ভাষাটাই অমন। একটা ভারী বোঝার মত লাগে আজকাল কাউকে বোঝার চেষ্টাটাকে। একটা যন্ত্রের কথা দেখলাম ইউটিউবে। নারী আচরণ নিয়ে বিভ্রান্ত যারা, তাদের জন্য যন্ত্রটা। ভিডিওটাতে যন্ত্রটা নারীদের যে কোন বাক্যের ঠিক ঠিক অর্থটা দেখিয়ে দেয়। আর আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি, অমন যন্ত্র যদি সত্যি থাকত!
না বুঝবার সমস্যাটা আমার সেই জন্ম থেকে। মার হাসির পেছনের কষ্টটা বুঝিনা, বোনের রাগ বুঝিনা, সিনেমার নায়িকার সংলাপগুলোও দূর্বোধ্য লাগে।


বোঝার ক্ষমতা আমার নেই, সেটা কখনো অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়, কখনোবা শাস্তিযোগ্য অপরাধই হয়ে দাঁড়ায়। বুঝিনা, দোষটুকু আমার?  ভুল বোঝার রোগটা আমার একদম নেই। সমস্যাটা অন্যখানে। কিছু নিজ থেকে একদমই বুঝিনা। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও আশঙ্কা নিয়ে ভাবব, ভুল বুঝছিনা তো? শেষমেশ বোঝাই হবেনা আর। আমার বুঝবার একটা উপায়ই আছে, শুদ্ধ বাংলায় সবকিছু বলে দেয়া। আমাকে বলে দিতেই হবে, নইলে আগামাথা কিছুই বুঝতে পাব না।

বিপত্তিটা এখানেই, মানুষের মন বড় বিচিত্র। সবচেয়ে বেশি বলতে ইচ্ছে হয় যেগুলো, সে কথাগুলো লুকানোর প্রবণতাই আবার সবচেয়ে বেশি! ইচ্ছেকে চেপে রাখা ভারি কঠিন। কিন্তু মানুষ দিনের পর দিন কঠিন কাজটা করতে থাকে। কঠিন কাজটা করার শখটা হয়ত জাগে অস্বস্তি, লজ্জা, ভয়, কিংবা অহংকার থেকে। কোন একদিন হয়ত মনের ভুলে খানিকটা বেরিয়ে গেল, শুরু হয় ধামাচাপা দেয়ার কারসাজি। সেটা চলতে থাকে অদ্ভুতুড়ে সব প্রক্রিয়ায়। শেষতক, মনের কথার বিপরিত একটা চিত্র দাঁড় করিয়েই তবে স্বস্তির শ্বাস পড়ে। হয়তবা খানিকটা দুঃখ নিয়ে।

কিছুদিনে আমার বড় ভুল একটা। মানে একটার কথা মনে পড়ছে, কিংবা আমি জানি শুধু ঐ একটার কথাই। সেটা আমার জন্য টেনে এনেছে নানারকম বিপত্তি। উৎস ছিল ঐ না বোঝা। আমি যদি একটা মেয়ে হতাম, ব্যাপারগুলো আমার কাছে টলটলে স্বচ্ছ লাগত। কিন্তু আমি মেয়ে না হওয়ার অপরাধে দিনের পর দিন নানারকম ব্যাপারকে গুলিয়ে ফেলতে শুরু করলাম। একসময় জট পেকে গেল ব্যাপারটা। আর ওপাশ থেকে, একজন বসে বসে কলকাঠি নাড়ছিল। তাঁর উদ্দ্যেশ্য ছিল বুঝতে দিয়েও বুঝতে না দেয়া। ব্যাপারাটা কিরকম, বলি। আমি সব দেখব, সব জানব, তবু জানা ব্যাপারটাকে বিশ্বাস করবনা। ঘোলাটে ব্যাপারকে আরো ঘোলাটে করার জন্য আরো কতক উপাদান দরকার ছিল। সেগুলোর জোগানদাতা হিসেবে যখন একই মানুষ আবির্ভূত হল, তখন আমি ভীষণরকম বোকা বনে গেলাম। আমার কাছে মনে হতে শুরু করল, আমি যা দেখছি, যা দেখতে আমার আসলেই ভালো লাগে, সেগুলো সব ভুল। মন খচখচ করতে লাগল, আসলেই সব ভুল? এখানে এসে আমি আটকে গেলাম।

প্রত্যক্ষ সব প্রমাণে আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। জানা ব্যাপারটাকেই মিথ্যে মনে হতে লাগল। যে নিজেকে এমন ঘোলাটে করছিল, আমার মনে হতে লাগল সে নিজের কাছেই পরিষ্কার না। তাঁর জানা নেই সে কী চায়। আসলে তার জানা ছিল, এবং আমি যা দেখছিলাম, তাইই ঠিক ছিল। কিন্তু কিছু কাঁচা অভিনয়ই ঘোট পাকাল। ঘোট তো ঘোট, সে যে মহা প্যাচ!

হোমো সেপিয়েন্সের যখন এক্স-ওয়াই ক্রোমোজম দুটোই থাকে, তখন একটা প্রবণতা আপনাই দাঁড়িয়ে যায়। স্পষ্ট করে শুনতে হবে, স্পষ্ট করে জানতে হবে। স্পষ্ট জানা বিষয়ে বিশ্বাস, বাকিটায় ধন্দ। এই স্পষ্টতায়ও আবার শর্ত দাঁড়ায়, কারনের উৎস থেকেই আমাকে জানতে হবে। পুরো জগৎটা ঘ্যানঘ্যান করুক, বিহ্ববলতা রয়ে যাবে। মনে হবে ঠিক জানছিনে। সেই মনে হওয়াটা দিন দিন ঘন হবে, এবং একসময় এমন একটা কিছুতে উৎসাহিত করবে, যা আকাশ ভেঙ্গে মাথায় ফেলতে বিন্দুমাত্র সময় নেবে না।

আমিও ব্যাপারটার শিকার। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বার আগে, যে কাজটা করতে আমার মন উৎসাহ দেয়, তা আমি একদিন করি। ফল হিসেবে সেই আকাশ ভেঙ্গে পড়া! ভেঙ্গে পড়া আকাশকে না সামলেই আমি সামনে দাঁড়াই। স্পষ্ট করে জানতে চাই। জানতে পারি, এতরকম স্থৈর্যচ্যুতির কোন প্রয়োজন ছিল না। অস্পষ্ট করে যা জানা ছিল, স্পষ্ট উত্তরটাও সেরকম। তবে কেন এত কান্ড? স্পষ্ট উত্তরটা যদি অতটাই স্পষ্ট হয়, তবে কেন অভিনয়, কাদা ছোড়াছুড়ি, অতঃপর নৈঃশব্দকে ডেকে আনা? না বোঝার অপরাধে এগুলো হয়ত আর কক্ষণো বদলাবে না। চাপা দুঃখ হয়ে রয়ে যাবে।

এজন্যই দরকার ছিল MANSLATER যন্ত্রটা। সেটা দিয়ে কী হত? আমি 'অর্ধেক' শব্দটার লাখ লাখ সুন্দর অর্থ জানতে পেতাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন