বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

দীর্ঘশ্বাস


কী রাঁধছ?’  
আমার স্ত্রীর ছোট্ট মেসেজ ফোনে ভেসে উঠল। আমার খানিকটা দুশ্চিন্তা হল। উত্তর দিতে হবে, এবং কিছু একটা মিথ্যে বলতে হবে। কারন আমি এখনো বিছানায় শুয়ে একটা বই পড়ছি। দুপুর যদিও দুইটা বাজে, মুখও ধোয়া হয়নি। ফিজিক্সের শিক্ষিকা বিয়ে করার নানারকম ঝামেলা। ভ্রু কুঁচকে বকাবকি করতে তাঁদের একদম মায়া হয় না। আমি অকম্মা, ঘরে বসে দু চারটা কলাম লিখি পত্রিকায়, আর লবণাক্ত-আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকায় পানির সমস্যা সমাধান নিয়ে নানারকম কাজ করি। এই কিছুদিন ইউনিসেফ এর সাথে কাজ করলাম,

শৈশবের তালপুকুরওয়ালা বাড়ি

আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন তেমন দুষ্টুমি শিখিনি। এর একটা কারন হয়ত বাবা শিক্ষক, এবং তাতে বাসার পরিবেশটা অন্যরকম ছিল। দুষ্টুমির জন্য বকা খাওয়ার ব্যাপারটা একদম মনে পড়েনা। শুধু দুপুর বেলা যখন মা ঘুমোতেন, তখন অভ্যাস ছিল আস্তে করে উঠে গিয়ে খেলতে বসা। বাড়ির বাইরে যেতাম না। বিশাল বাড়ির কোন এক কোনে কিছু একটা খেলা আবিষ্কার করে সেই খেলায় মত্ত হতাম। ধুলোবালি মাখা অন্যতম অভ্যাস ছিল। আমার মনে পড়ে আমার তেমন খেলনা ছিল না। নিজের কোন প্রিয় খেলনার কথা আপাতত মনে করতে পারছি না। ছয়-সাত বছর বয়সের খেলনা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি ইয়ো-ইয়ো। মাঝে মাঝেই ইয়ো ইয়ো কিনতাম। এছাড়া তেমন কিছু না। খুলনা শহরের আমাদের ঐ বাড়িতে একটা পুকুর আছে। গত দশ-পনের বছরে নানা ভাড়াটিয়ারা সেই পুকুরটার যে হাল করেছে, এখন গেলেই খুব মন খারাপ হয়। পুকুরপাড়ে ছিল তালগাছ, সেটায় আলো পড়ছেনা বলে তেমন বড় হচ্ছেনা। আরেকটা ছিল ছফেদা গাছ। সেই পুকুরে সারা বছর পানি থাকত। বর্ষাকালে খুব বৃষ্টি হলে পানি থৈ থৈ করত। কখনো পানি উঠে ঘরের দেড়গোড়া পর্যন্ত চলে আসত, আমরা জানালায় বসে দেখতাম সেটা মনে পড়ে।

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

হেই টিচার, লীভ আস কিডস এলোন!


"হেই টিচার! লীভ আস কিডস এলোন"
হাতুড়ি মেরে জীবনটা পঙ্গু করে দিতে কে বলেছে আপনাদেরকে? আপনাদের জীবিকা। তাই বলে এত নির্লজ্জভাবে? পিংক ফ্লয়েড ব্যান্ডের গানগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখছি। প্রিয় শিক্ষকেরা, আপনারা বাবার মত, তবে সৎ বাবা।
ভেবেছিলাম রেজাল্ট নিয়ে লিখবনা কিছুই। কিন্তু তা হল না। প্রচন্ড রাগ লাগছে। আমি এই মাত্রার লুজার নই যে এই অসহ্য রেজাল্ট আমার নামের পাশে দেখতে হবে। পরীক্ষা দিয়েছি জান বের করে। সত্যি কথা হল, এই টর্চার সহ্য করতেই খেটেখুটে পড়েছি অনেক। শেখার ইচ্ছে থেকে খুব অল্প কয়টা কিছু পড়েছি। হলটা কী? একটু থমকাতে পারি, একটা বিষয়ে একটুখানি ঝামেলা হতে পারে। তবে চারটা বিষয়ে ছিটকে পড়ার মত লুজার কোনকালে আমি ছিলাম বলে মনে পড়েনা।

আমাদেরকে মেশিনে ঢুকিয়ে পিষে নুডলস বানাতে আপনাদের কেমন আনন্দ হয়, তা দেখতে ইচ্ছে করে। আপনার ছেলেমেয়েদেরকে যখন আপনার মতই শিক্ষা-পেশাজীবিরা পিষে দেয়, খুব ভালো লাগে? আমার বাবা একজন শিক্ষক। তিনি তার হাজারো শিক্ষার্থীকে এমনভাবে টর্চার করেননি কোনকালে। তাই তাঁর কাছে আপনাদের পিষুনি খুব একটা মধুর লাগার কথা না। তবে তিনি যেহেতু প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছেন জীবনে, নানা জায়গায় নানারকম শিক্ষকদের সাথে কাজ করেছেন, এমন দেশ থেকে শিক্ষক ট্রেইনিং নিয়েছেন, যে দেশে এই নির্লজ্জ খেলা নেই, তিনি জানেন শিক্ষকরা কেমন হয়। তবু সব শেষে এসব তাঁর কাছে অসহ্য।

এই আমি ক্লাস এইটে থাকতে সবচেয়ে ভালো বুঝতাম অংক আর বিজ্ঞানটা। বিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে একটা বাক্য বলেছিলাম, "শ্লা যা লিখেছি! আইনস্টাইন আসলেও পঁচানব্বুই এর নিচে নাম্বার দিতে পারবেনা"।

সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০১৬

একটি সুখি বাঘের আত্মকাহিনী

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ টাইগার মোবাইলস





শুরুর আগে
আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন একটা গল্প লিখেছিলাম, বেশ মন খারাপের গল্প। তখন শিকারীদের হানাদার মনোভাবে বাঘেরা ছিল বড় দুঃখী। সেই গল্পটা পড়ে এই গল্পটা শুরু করতে হবে। গল্পটা পাওয়া যাবে নিচের লিংকে- 

গল্পটা
সেই বাঘেরই মাসি। তাদের এখন সুখের সীমা নেই। তবু তো কিছু দুঃখ থাকে। তাতে কী? দুঃখ তো মানুষেরও আছে। মাসির মেয়েটা হয়েছে বড় চটপটে। কাজে মন নেই, ঘরকন্নায় মন নেই, বিয়েটাও দিতে পারছেন না। মাসি কাল বললেন, বিদ্যুৎ বিলটা দিয়ে আসতে, তাতেও তার আপত্তি। শুধু পারে মুখে লাল রঙয়ের মেকআপ মেখে মস্ত বীর সেজে ঘুরে বেড়াতে, যেন এইমাত্র এক হরিণ শিকার করে এল। আর এসেছে গরমকাল। একটু পরপর লোডশেডিং। অতিষ্ঠ হয়ে পড়তে হবে যে! মাসির কর্তা ঠ্যাঙয়ে রশি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে দুটো বানর নিয়ে এসেছেন বাজার থেকে। লাবণি পয়েন্টে বড় বাজার বসে হরিণের-বানরের। আজ যে হাটবার। 

সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এখনো বিদ্যুৎ আসার নাম নেই। রাত হলেই মশাগুলো বড় জ্বালাতন করে। ধুপ না জ্বাললে গুহায় টেকার উপায় নেই। এই মানুষগুলো হল পাজির পা-ঝাড়া। তাদের বসতিতে লোডশেডিং তো দূরের কথা, দিনের বেলায়ও বাতি জ্বলে। অথচ বনবাসীদের কোন অধিকার যেন নেই। ওদের জমি দখল করে মস্তবড় ইঞ্জিন বসিয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের, অথচ

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬

গেছিরে!


-নাকে আবার কী হল? রক্ত ঝড়ছে যে!
-মেরেছে।
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তা মারলটা  কে?
-একটা মেয়ে!
-গোলমেলে। করেছটা কী?
-আমারও তাই প্রশ্ন।
-ব্যাপারটা কী? তুমি করোনি কিছু?
-আমার তো তাইই ধারনা।
-তবে এমনিতেই মেরে দিল?
-সুযোগ পেয়েছে।
-তবে রে! কিছু করোনি? এসে মেরে দিল?

বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

কেন মেঘ আসে?

আকাশ ভেঙ্গে জল নামল। আমি টুপ করে ঢুকে পড়লাম বাড়িতে। বাড়িটা বড়, কয়েক তলা। সারা বাড়ি জুড়ে হৈচৈ। অনেক মানুষ, ছেলেপুলের অভাব নেই। হৈ-হৈ রৈ-রৈ লেগে আছে হরদম। সিঁড়ি বেয়ে সোজা উঠে গেলাম দোতলায়। একদম শেষ যে ঘরটা, সেটা আমাদের। ঘরে ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া! পরিবারের সবাই যে একঘরে! ভাই-বোনেরা আর মা। বাবা নেই। আর আছে বালিকা। তাতেই চমকে গেলাম। বালিকা আমার ওপর ক্ষেপে আছে সে মাসখানেক হল। একদম তাওয়ায় রুটি সেঁকবার মত চটে আছে। মুখ-দেখাদেখি বন্ধ। তাই তাঁকে ঘরভর্তি পরিবারের মাঝখানে দেখে তো না চমকে উপায় নেই। বাবা কেন নেই, সেটা নিয়ে কৌতুহল জন্মাল। আর জন্মাল বালিকার সবার মাঝখানে থাকা নিয়ে প্রশ্ন। আমি সাহস জমালাম। ভাবলাম, মার সামনে কি আর রাগ দেখাবে? খুব সাহস করে জোড়ে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলাম, কেমন আছ?
সে আমার চোখের দিকে চাইল। খুব রেগে থাকার সময়ে, কিংবা ভালোবাসায় সিক্ত সময়ের চাহনি তাঁর একদম একইরকম। দৃষ্টিতে তাই বোঝার কিছু নেই। তারপরে আমাকে যেন আরেকটু চমকে দিতেই মিষ্টি করে হাসল। এতটা মিষ্টি করে সে হাসে না তেমন। গম্ভীর মানুষ যে!। আমি আবারো অন্য কিছু জিজ্ঞেস করলাম। আবার মিষ্টি করে হাসল। কিন্তু মুখে টু শব্দটি নেই। বুঝলাম বিপদ কাটেনি এখনো। বলে ফেললাম, একটু বাইরে চলো। বড় আপার দিকে তাকিয়ে একটা ভদ্রতার হাসি দিয়ে আমার সাথে খুব শান্তভাবে বেরিয়ে এল। কিন্তু বিধিবাম! ঘর থেকে বেরুতেই মুখ ঝামটা দিয়ে সোজা লিফটে গিয়ে উঠল। আমি হা করে চেয়ে রইলাম। কেন মেঘ আসে, হৃদয়-আকাশে?

মাঠের মাঝখানে বিশাল এক পুকুর। আমি মাছ ধরেছি বড় একটা। মাছটার অধিকাংশ নীল। কেমন সুন্দর মায়াবি একটা মাছ, কিন্তু সেটাকে কেটেকুটে সবাই মিলে খেয়ে ফেলব! ভাইয়া অবশ্য ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। আমার খেতে ইচ্ছে হয়। আপাও বললেন চল খেয়ে ফেলি। বড় এক মাছ কাটা বটি আনলাম ঘর থেকে। আমি মাছ কুটছি আর বড় আপার সাথে গল্প জুড়েছি। দুনিয়ার সব গল্প রান্নাবান্নায় গিয়ে ঠেকছে। এর মধ্যেই মাছ কুটতে বিপত্তি বাঁধালাম। মাছের টুকরোর আকারগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। কোনটা অনেক বড়, কোনটা একদম ছোট। পেটির একটা টুকরো তো ট্রাপিজিয়াম! আমার লজ্জা হতে লাগল। ভীষণ লজ্জা। সে এসে দেখে কী বলবে? নিশ্চয়ই মুখ বাঁকা করে বলবে, মাছই কুটতে পারো না, আর সংসার সামলাবে কী! আপার সামনে এসব বললে কেমন করে মুখ গুঁজব?

লজ্জার মাত্রা প্রবল হতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি চোখ কচলালাম। বুঝলাম, মাছ কুটতে বিন্দু ভুলো করিনি। মাছই যে নেই! তবু লজ্জা গেল না। ভাবতে লাগলাম, এমন মাছ দেখলে সে কিইনা বলে!