বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সুপারস্টার ইটা ক্যারিণী এবং আমাদের রুবাব খান


ইটা ক্যারিনী আর তার জমজ বোনদের গল্প এখন সবাই জানি। ইটা ক্যারিনী হল ক্যারিনা মন্ডলীর একদম অনুজ্জল একটা তারা। খালি চোখে তো দেখা যাবেই না, মোটামুটি ভাল মানের টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যাবে। তাহলে একে নিয়ে সবার এত আগ্রহ কেন? আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথে একটামাত্র সুপারস্টার আছে। সেটা হল ইটা ক্যারিনী। গল্পের সুপারস্টার নয়, সত্যিকারের একমাত্র সুপারস্টার। এর ভর অনেক বেশি, হাজার গ্রহকে ধরে রাখতে পারবে এমন।


ইটা ক্যারিনী তারার কথা দেখা যায় সপ্তদশ শতাব্দীর তারাচিত্রে। তখন এর উজ্জলতা ছিল চার। চতুর্থ মাত্রার তারা খালি চোখে দেখা যায় এখনো, যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে। ১৮৪৩ সালে হঠাৎ এগারো-তের মার্চের মধ্যে কোন একদিন দেখা গেল তারাটা আকাশের দ্বিতীয় সবচেয়ে উজ্জল তারা হয়ে বসে আছে! এমনি সবচেয়ে উজ্জল তারা লুদ্ধক (বৃহৎ কুকুর মন্ডলীতে)উজ্জলতা মাইনাস এক এর মত! ১৮৩৭ সাল থেকেই দেখা যাচ্ছিল এর উজ্জলতা পরিবর্তন হচ্ছে। কয়েক বছর পর ১৮৫৬ সালে দেখা গেল উজ্জলতা কমছে। এবং ২০১২ সালে নাসা দেখিয়েছে উজ্জলতা ৭.৬। মানে আগের চেয়েও অনেক অনেক কম উজ্জল তারা এটা। ইটা ক্যারিনী একটা তারকা জগৎ, যাতে অন্তত দুটি তারা একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এদের একটাকে বলে ইটা ক্যারিনী-এ এবং অন্যটা ইটা ক্যারিনী-বি। প্রথমটা যেহেতু ভরে, আয়তনে বড়, তাই এ ছোট্ট তারকাজগতে এর দাদাগিরিই বেশি কাজে দেয়। এরা একটা অপরটাকে ঘিরে ঘুরতে সময় নেয় সাড়ে পাঁচ বছর। আর তারাদুটোর অবস্থান পৃথিবী থেকে সাড়ে সাত হাজার আলোকবর্ষ দূরে। তারাদুটো মিলে শক্তিশালী টেলিস্কোপে দেখা যায় একটা তারা। উজ্জলতা ৭.৬। 

ক্যারিনা মন্ডলীতে দেখা যাওয়া তারাটা দক্ষিণাকাশে দেখা যায়। ৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ , বা তারও উত্তরের দেশ থেকে দেখা সম্ভব না এ তারা। আমরা তেইশ ডিগ্রি উত্তরে, তাই দেখতে পাব ভালো টেলিস্কোপ হলেই। কিন্তু দেখে আকৃষ্ট হবার মত তারা এটা না। দেখতে বিরক্তিকরই লাগবে নীল এ তারাকে। কিন্তু ভরই এর মূল আকর্ষণ। তো এগুলো কীভাবে দেখবে? এখন আছে নাসা-এসা হাবল টেলিস্কোপ। নক্ষত্র শিকারী হাবলের নামে তৈরী এ টেলিস্কোপ আকাশে উড়ে-ঘুড়ে অদ্ভুত সব তথ্য দেয় আমাদেরকে।

এরকম বড় (যেটাকে বলে সুপারস্টার) একটা তারার কথাই জানা ছিল বিজ্ঞানীদের। কিন্তু নাসার বাংলাদেশী গবেষক ২৯ বছর বয়সী ড. রুবাব খান এবং তার দল ভাবছিল আরো একটা সুপারস্টার এর দেখা মিলতে পারে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে দেখা গেল, একটা নয়। খুঁজতে গিয়ে তারা দেখা পেয়েছেন পাঁচ পাঁচটি সুপারস্টার এর। ওই তারাগুলোকে আমরা এখন কী বলব? রুবাব খানই বললেন এরা হল সুপারস্টার ইটা ক্যারিনীর বোন (sisters of eta carinae) বহু আগে থেকে বিজ্ঞানীরা একটা সুপারস্টার চিনতেন, এবং তারা বলতেন আমাদের জানা সবচেয়ে বেশি ভরের তারা হয়ত এটাই, যেটা এত কাছে যাতে আমরা এর ব্যাপারে গবেষণা করতে পারি। এখন রুবাব খান দেখালেন, আমরা আরও পাঁচটি সুপারস্টার পেয়েছি, যেটা নিয়ে গবেষণা করতে পারি। এর ক্রেডিট অনেকখানি নাসা এবং এসা (European Space Agency) এর। অর্থাৎ হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এর। হঠাৎ করে যে ইটা ক্যারিনীর উজ্জলতা বেড়ে গিয়েছিল, তার কারন অনেকাংশে অজানা। ধারনা করা হয় কোন এক সুপারনোভা জাতীয় কিছু। যাই হোক, এজাতীয় বিস্ফোরনে অনেক সময় প্রাণ সৃষ্টির জন্য যা প্রয়োজন সেসব রাসায়নিক উৎপন্ন হয়ে যেতে পারে।

তবে তারার দুরুত্ব সাড়ে সাত হাজার আলোকবর্ষ হওয়ায় দেড়শ বছর আগে দেখা এ বিস্ফোরন কিন্তু ঘটেছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছর আগে। কে জানে! ওসময়ে প্রাণ তৈরীর মহামিলন শুরু হয়ে গেছে কিনা দক্ষিণ আকাশের ক্যারিনা মন্ডলীতে!

[তথ্য কৃতজ্ঞতা: 
নাসা 
→ESA 
উইকিপিডিয়া 
→Big bang to dynamic earth 
তারা পরিচিতি 
→ google sky map 
→stellarium ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন