সোমবার, ১৮ মে, ২০১৫

ধ্রুব, সে কি পাইয়ের মতই ধ্রুব?


উত্তর মেরুর (north pole) দিকে তাকালেই আমরা পাই একটা তারা। ধ্রুবতারা। ওর অবস্থান সবসময়ই ধ্রুব। ‘পাই’ এর ব্যাপারে গল্প আছে, সে তার শারিরিক শিক্ষককে তিনমাস পর বিদেয় করে দিয়েছিল একটুও মোটাতাজা হতে না পেরে। ঠিক তেমনি আমাদের ধ্রুবতারা কত গাড়ি কোম্পানির নামে মামলা করেছে কে জানে?

আগেই বলে নেই, আমি পিচ্চি, তাই পিচ্চিদের জন্য লিখেছি। বড়রা লেখাটা পড়ার চেষ্টা করে ভ্রু কুঁচকে "কি লিখেছে এসব!" না বলে, না পড়াটাই ভালো।

ধরো তুমি ঠিক উত্তর দিকে তাকিয়ে তারাগুলো দেখলে। ঘন্টা দুয়েক পর এসে আবার তাকালে। দেখবে সব তারা একটু দূরে সরে গেছে। শুধু একটা তারাই তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আগের মত। ওর নামই ধ্রুবতারা। এভাবে আসলে ওকে খুজে পাওয়া সম্ভবত কষ্টকর, কিন্তু আমি এটা আগেই বললাম কারন তারাটাকে একবার খুজে পাওয়ার পর তুমি পরীক্ষাটা করে দেখলে বিমল আনন্দ পাবে। তুমি তোমার ছাদের একটা জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে বের করলে, ধ্রুবতারাকে দেখা যায় তোমার বন্ধুর বাসার ছাদে যে ব্রাজিলের পতাকা লাগানো বাঁশটা আছে, ঐটার সোজা। এরপর থেকে তুমি যখনই ওখানে গিয়ে দাঁড়াবে। সেই বাঁশের দিকে তাকিয়েই তুমি পেয়ে যাবে অনিন্দ্য সুন্দর এই তারাটিকে। বছরের পর বছর ঐ বাঁশের আগায় পাবে তাকে।

এবার বলি কেন সে ধ্রুব? সব তারারা যখন আকাশময় ঘুরে বেড়ায়, তখন সে কেন ওখানে বসে বসে রাতের পথিককে উত্তর দিক চেনায়?

পৃথিবীর অনেক অনেক দূরে আছে এই তারাগুলো। কোটি কোটি মাইল দূরে। এত দূরে থাকায় তাদের স্বাভবিক চলন (সব তারাই কিন্তু ঘুরছে, আমরা সেটা টের পাইনা) আমরা দেখিনা। তবুও সন্ধ্যার আকাশে যে তারাকে পূর্বে দেখো, সেটা ভোরে কেন পশ্চিমে থাকে? একটিই কারন, পৃথিবীই ঘুরছে! সকালে সুর্য নামের তারাটি যেমন পূবে থাকে, সন্ধ্যা পশ্চিমে, তেমনি সন্ধ্যার পর থেকে অন্য তারারাও সূর্যের মতই উদয় হতে থাকে। দিনের বেলাও অনেক তারারা দেখা দেয়, কিন্তু সুর্যের আলোর কারনে আমরা সেগুলো দেখি না।

একটা কমলালেবু নাও, (না থাকলে গোল কিছু নাও)। এর মাঝখানের দিকে বাংলাদেশকে একটা ফোটা দিয়ে দেখিয়ে দাও। এখানে এখন আছো তুমি। এবার একটা আপেল নাও, সেটাকে প্রথমে ধরো সূর্য। দুটোকেই একটু দূরে টেবিলের উপর রাখো। তোমার কমলালেবুকে এক জায়গায় রেখে ঘোরাতে শুরু করো। কি দেখছ? দিন-রাতের  ব্যাপারটা স্পষ্ট? এবার আশেপাশে অনেকগুলো চকলেট রেখে অনেকগুলো তারা বানাও। আবার ঘুরিয়ে দেখো তোমার কমলালেবুকে। গেল!

এবার কোনদিন ম্যাপ, কিংবা গ্লোব দেখে থাকলে তুমি কমলালেবুর কোনটা দক্ষিণ, কোনটা উত্তর তা পেয়ে যাবে। উপরের দিকটা উত্তর। আর ধ্রুবতারা থাকে কিন্তু ঠিক ঐ উত্তরেই। একদম সোজা ঐ উত্তর মেরুর দিকে। সুতরাং এক কাজ করো। একদম উত্তর দিকে একটা চকলেট (তোমার ধ্রুবতারা) ধরে তোমার পৃথিবীকে ঘোরাওতো। আশেপাশের সব তারাগুলোকে কি মনে হচ্ছে স্থান বদলাচ্ছে? (কমলার গায়ে তোমার অবস্থান ফোটা দেওয়া আছে, সেখান থেকে দেখলে কি হবে সেটা ভাবো) কিন্তু তোমার অবস্থান থেকে ঠিক উপরের দিকে তাকালে যে চকলেটটা আছে, সেটা কিন্তু এক জায়গায়ই আছে!

তুমি ঘোরো, মনে হয় তোমার আশেপাশের সবকিছু ঘুরছে। কিন্তু তোমার উপরে যা রইল, তা সেখানেই রইল।
এত্ত বকবক শুধু শুধুই করলাম। একটা বল টেবিলের উপর রেখে বনবন করে ঘুরিয়ে দিয়ে দেখো, চারপাশ ঠিকই দৌড়াচ্ছে কিন্তু ঠিক উপরে যে বিন্দুটা আছে তারতো কোন নড়ন-চড়ন নেই! এই একটা বাক্য দিয়েই তুমি ধ্রুবর ধ্রুব থাকার রহস্য বুঝে ফেলবে, যদি বুদ্ধিমান হও।

আকাশের সব তারাকে যদি ভাবো একটা থালায় আছে, তাহলে ঐ থালার মাঝখানে আছে ধ্রুবতারা। সব যেন ওকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে!

কিন্তু Polaris, Pole Star কিংবা ধ্রুবতারা একে যে নামেই ডাক, খুজে পাবে কই? এককথায় বলে দেই, উত্তরে। খুজে দেখো। (চিরকুটের জাদুর শহর, প্রানের শহর ঢাকা থেকে ওকে খোজা আসলেই একটু কষ্টকর। google sky map নামের স্মার্টফোন অ্যাপ থেকে একে সবচেয়ে সহজে পেতে পারো। কিন্তু ওসব বাদ দিয়ে খালি চোখেই খুজে দেখো। সৈন্দর্যকে খুজতে প্রযুক্তি টানতে কারইবা ভালো লাগে? সৈন্দর্যকে তোমার সুন্দর চোখ দিয়েই খোজো।

আর খালি চোখে ধ্রুবকে পেতে চিনতে হবে সপ্তর্ষিমন্ডল। আমার প্রিয় সপ্তর্ষির পুলহ, আর ক্রুতু (dubhe and merak) নক্ষত্রকে সামনের দিকে সরলরেখায় বাড়ালেই পাবে তোমার ধ্রুবকে। এতটুকু মনে রেখো। পরে সপ্তর্ষি আর অন্য তারাদেরকে নিয়েও লিখব। সবার আগে ধ্রুবতারা নিয়ে লিখলাম, কারন তুমি যদি ধ্রুবতারার ধ্রুব থাকার রহস্যটা বুঝে থাকো, অর্থাৎ হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করে থাকো, তাহলে তুমি পুরো আকাশটার স্বরূপ জেনে যাবে। কোন তারা কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে, সেটা দেখলেই তুমি বুঝে যাবে কেন যাচ্ছে। না বুঝলে ভয় নেই, কমলালেবু আর চকলেটগুলোকে সত্যিকার অর্থেই কিছুক্ষণ ঘুরিয়ে দেখো, তুমিই আকাশের অনেককিছু আবিষ্কার করে ফেলছ!
আর পরীক্ষা করা শেষ হলে কমলা, আপেল আর চকলেটগুলো পাঠিয়ে দিও আমার বাসায়! অন্তত শুধু চকলেটগুলো!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন