আমার নানারকম স্বপ্ন আছে। সেসব কাজ করে নানাভাবে। শখের বশে স্বপ্ন
বুনি আমি, এরপর ছুটি তার পেছনে। তেমনি কোন একদিন মনে হয়েছিল ভাষা শিখব। অনেক অনেক
ভাষা শেখার ইচ্ছা তখন দানা বেঁধেছিলো। কেন ভাষা শিখব আমি জানতাম না তখন, কিংবা এখনো। একেক সময় একেক ভাষার কথা ভাবি, হয়ে ওঠে
না শেখা।
জন্মের পর থেকে শিখেছি বাংলা। পড়তে আর লিখতে শিখেছি। বলতে পারিও
বেশ। কারণ এটা আমার মাতৃভাষা। এরপর আর অনেক ভাষা শিখতে হবে, তখন জানতাম
না। তবে সেই শৈশবে অক্ষর চেনার পর নিজে নিজে উচ্চারণ করে পড়তে, লিখতে শিখে গিয়েছিলাম আর দুটো ভাষা। ইংরেজি আর আরবি। অনেক পরে এসে হয়ত
সেটা কাজে দিয়েছে, অন্য ভাষা শেখার সাহস যুগিয়েছে মন নিজেকে।
আরেকটু পরের বয়সে ঊর্দু অক্ষরটা চিনতাম, লিখতে পারতাম। পড়তে
কষ্ট হত, কারণ ঊর্দূর ফন্টগুলোকে আমার মনে হত আরবির বাজে
হাতের লেখা সংস্করণ। এসব গল্প বয়স আট হবার আগের।
আমার কাছে আমার স্বপ্ন বড়, তাই মূল গল্প সেটাই, যেখানে স্বপ্নের কথা শুরু। একটু বয়সে যখন অনেক বই পড়লাম তখন ভাবলাম ভাষা
শিখতে হবে আমাকে। শিখতেই হবে। ইচ্ছে হল তাই শিখতে হবে। কিংবা তখন যত বই অনুবাদ
পড়তাম, সেগুলো আসল ভাষায় পড়তে ইচ্ছে হত। আর আগ্রহ ছিল
প্রাচীন লিপির প্রতি। অসুস্থ থাকতাম অনেক বেশি, একটা সময়ে
যেতাম ঢাকা মেডিকেলে। সেসময়ে মায়ের সাথে দুটো জায়গায় যাওয়ার অভ্যাস ছিল হাসপাতাল
থেকে বেরিয়ে। জাতীয় জাদুঘর, কিংবা পাবলিক লাইব্রেরী (শিশু
পাঠকক্ষ, যেটার নাম সম্ভবত সুফিয়া কামালের নামে)। জাদুঘরে
অনেক সময় নিয়ে দেখতাম বাংলা লিপির বিবর্তন। বুঝতে চেষ্টা করতাম কেমন করে শেখা
সম্ভব। কিন্তু যত শিলালিপি সংরক্ষিত থাকত, তার কিছুই ঐ বর্ণ
ব্যবহার করে লেখা না। সব ফার্সী, পর্তুগিজ, কিংবা আরো প্রাচীন কিছুতে লেখা। সেসব আর বোঝা হত না।
ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ জন্মাল প্রচণ্ড। ততদিনে অনেক কিছু বুঝে গেছি।
একটা ভাষা শেখা কতটা সময়ের ব্যাপার, সেটা বুঝে গেছি। ইংরেজি আর আরবি পাঠ্য ছিল
আমার, তাই সে দুটোর প্রতি বিতৃষ্ণাই জন্মাচ্ছিল একরকম।
কিন্তু অন্যান্য ভাষা কেমন করে শিখব তা নিয়ে ছক কাটতাম। কিন্তু এগোয়নি কিছুই।
এসব গল্প অনেক বেশি ছোটবেলার। হয়তবা বারো-তেরো বয়সের। কিংবা আগের।
এখন আমার বাকেট লিস্টে লেখা আছে গ্রাজুয়েশনের আগে শিখব দশটা ভাষা, জীবনে মোট
বিশটা। এর অর্ধেক অন্তত লেখা-পড়ায় পটু, বাকিগুলোয় গল্প পড়তে
জানলেই হবে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট আছে। আমি এখনো
পরিষ্কারভাবে জানিনা সেখানে কোন কোন ভাষা শেখানো হয়। সেখানে এখন জড়িয়ে পড়ব। বছরে
বছরে একটা ভাষা। শুরুটা সেখানে না গিয়েই হয়ে গেছে। আরবি পারি, ইংরেজি পারি,
বাংলা পারি। ঊর্দূর বর্ণমালা জানি। এবার একটা উপমহাদেশীয় ভাষা,
একটা ইউরোপীয় ভাষায় হাত দিতে হত। অসম্ভব আনন্দের ব্যাপার, এক বন্ধুকে পেয়ে গেছি, যে হিন্দি লিখতে জানে। আর
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই হিন্দি বলতে জানে, আমার বন্ধুটাও
সেটা জানে। শুরু হল আমার হিন্দিপাঠ।
বর্ণমালা ছাপিয়ে নিলাম কম্পিউটার ল্যাব থেকে, লিখতে লাগলাম
মিলির সাহায্যে। এখন সময় পেলেই লিখতে থাকি। ক্লাসের ফাঁকে, বাসায়
অবসরে সবখানে আমার হিন্দি লেখার চেষ্টা। মন সবসময় বিক্ষিপ্ত, কিংবা কষ্টে থাকার কারণে সেটায় বাধা কম পড়ছে না। তবু তো চেষ্টা করছি!
বাংলা,
আরবি, ইংরেজি জানি, বুঝি,
পড়ি বেশ। আরেকটা ভাষা শিখতে হবে এক্ষুণি। হিব্রু। কোথায় কেমন করে
শিখব জানিনা, কিন্তু মনে হচ্ছে আমাকে হিব্রু শিখতেই হবে।
প্রাচীন ভাষা, ভালোলাগার ভাষা। এর সব কথা এখন ইংরেজিতে লেখা।
কিন্তু আমাকে টানে প্রাচীন কবরের গন্ধ মাখা ভাষাটাই। যদি
হিব্রু না শুরু করা যায় তবে শিখতে বসব ইউরোপীয় ভাষা, স্প্যানিশ
কিংবা পর্তুগিজ। ইউরোপে, আমেরিকায় এ ভাষার খুব কদর। দক্ষিণ
আমেরিকা আর আফ্রিকার অনেক দেশের জাতীয় ভাষাওতো ঔপনিবেশিক শোষণে এখন এগুলো। এতে আছে
ইতিহাস, আর বর্তমান। একালের বিশ্ব আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট
বুঝতে ইংরেজি আর ইউরোপীয় একটা ভাষা শিখেই হবে। সেই ভাষা শুরু করব শীঘ্রই। হিব্রু
এখন না পেলে এমাসেই।
আর হিন্দি শিখে কি হবে? আমার ইতিহাস অনেকটা আছে হিন্দিতে,
এটা আমার কাছের লোকদের ভাষা, আর এ ভাষা আয়ত্তে
আনতে বেগটাও কম পেতে হবে।
আর বলতে শিখব কোথায় হিন্দি? মশলা সিনেমা দেখে? ঠিক তাই।
ভাষা শিখে লাভটা হচ্ছে কী? ল্যাবে একদম পেছনের টেবিলে দাঁড়িয়ে
বর্ণমালা অনুশীলন করা যায়, আর বিরক্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে
হিন্দি বর্ণে লেখা যায়, "মহিদ স্যার এত জ্বালায় কেন?"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন