অয়ন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিল, কেমন করে হল
এসব? হরতালে সামনে এগিয়ে বড় একটা ইটের টুকরো ছুড়ে মেরেছিল
পুলিশের দিকে, এবং কি সৌভাগ্য! এক পুলিশের হেলমেট ছিল না
মুখে, ইটটা গিয়ে তার মুখেই লেগেছিল। ঝরঝর করে রক্ত বেরিয়ে
এলো, নাকটাও গেল বোধহয় বেচারার। ও হঠাৎ বিচলিত বোধ করছিল।
সাধারণত বাম দলগুলো হরতালে নিরাপদ দুরুত্বে থেকে ইট-পাটকেল ছোড়ে, কিন্তু কেউ কারো ধরাছোঁয়ার ভেতরে যায় না। কাউকে আঘাত করার মনোবাঞ্ছা
পুলিশের নেই, বিপ্লবিদেরও নেই। এর মাঝখানে একদম পাশে এক
কাঁদানে গ্যাসের শেল পরায় কিছুক্ষণ মুখ থুবড়ে পরে ওকে খক খক করে কাশতে হয়েছিলো।
অন্য একজন মুখের সামনে লাইটার জ্বেলে খানিকটা সুস্থ করে দেয়। সেটা সামলে ওঠার পরই
অনেক বেশি রাগ নিয়ে তেড়ে গিয়েছিল অয়ন। গুলি খাওয়ার আগে ফিরেও আসতে পেরেছিল আড়ালে। কিন্তু
জলপাই রঙের পাঞ্জাবিটা। সেটা পুলিশদের চোখে আটকে ছিল। দুপুরের আগে আগে হঠাৎ ধাওয়া
করে এসে ধরে ফেলেছিল। রাস্তার ওপরে রাইফেলের বাটের আঘাতে জ্ঞান হারিয়েছিল অয়ন
শীঘ্রই। তবে কাল ইউটিউবে সেটার ভিডিও দেখে থমকে গিয়েছিল ও। জ্ঞান হারানোর পরে
আট-দশজন পুলিশ ওকে বেধড়ক পিটিয়েছে। কোন এক পথচারীর মোবাইলে সে দৃশ্য ধারণ না হলেও
হয়ত হত। অসুস্থ অবস্থায় পুলিশ ওকে হাসপাতালে দিতে চায়নি, চেয়েছিল
চৌদ্দ শিকে ভরতে। কিন্তু পথচারীদের বাধায় ওকে আনা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। পরদিন
খোঁজ-টোজ নিয়ে পুলিশ যখন বুঝতে পেরেছে, কোন দলেই নেই ও,
তখন অবাক হয়েছে, এবং মামলা না করেই চলে গেছে।
এসব ইস্যুতে দলের লোক ছাড়া ধরে লাভ নেই। ছাত্রদের দু-তিনটে বাম সংগঠনও ঘুরঘুর করে
চলে গেছে। দলের ফায়দা নেই, নিউজ ভ্যালু নেই এখন আর, তো হবে কী পাশে থেকে?
এসব তিনদিন আগেকার কথা। এখন সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা, কিন্তু
হাড়গুলো সব অক্ষত। পুলিশ কি আজকাল এনাটমি পড়ে? নিখুঁতভাবে
কেমন করে পেটায় ঐ হুড়োহুড়ির মধ্যে? মাথায় আর উরুতে ছাড়া
কোথাও ব্যান্ডেজ নেই। ফুরফুরে মেজাজে সোভিয়েতভ কৌতুকভ পড়ছিল। এসময় মিমি এল।
মুখ থমথমে, ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে বসল নিজে। এই তিনদিনে মিমি
আসতে পারত, কিন্তু কেন যেন আসেনি। হয়তবা এই অবস্থা দেখতে
চাচ্ছিল না। ফুরফুরে মেজাজ উবে গেল ওর মুখে ঝড় দেখে। নিঃশব্দতা ভাঙল একটু পর।
-না গেলে কী হত?
-গ্যাসের দাম বেড়ে যেত।
হেসে ফেলল মিমি। এমন সরল উত্তর আশা করেনি। মিমির মুখে মেঘ জমলেই
আয়নের মুখে খই ফোটে। নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে শুরু করে সে। কিন্তু আজ এমন
সোজাসাপ্টা কৌতুক! ব্যাগ থেকে একটা কাগজের ঠোঙ্গা বের করে দেয় মিমি। রোগী দেখতে
এলে ফল-হরলিক্স নিয়ে আসতে হয়,