ঢাকা কতটুকু? অদ্ভুত প্রশ্ন বটে। ঢাকা শহরটা অনেক বড়। এখন নদীর
ওপারেও সম্প্রসারিত হয়ে গেছে। কিন্তু ঢাকা কত বড় ছিল? বুড়িগঙ্গার
তীরে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটা শহর। এবং তিন নেতার মাজারের সামনে গিয়েই শেষ হয়ে গেছে।
বলায় ভুল হয়ে গেল। যেখানে ঢাকা শেষ হয়েছিল মোঘল আমলে, সেখানটায়
গড়ে উঠেছে তিন নেতার মাজার। হু, সেই অযত্নে পড়ে থাকা ঢাকা
গেট। যেটা থেকে বেরুলেই আমাদের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।
আজ আহসান মঞ্জিল যাওয়ার ইচ্ছে ছিল সবার। একটা পরীক্ষাও ছিল। আমরা যখন দুষ্টরা আগে, ভদ্ররা পরে অডিটোরিয়ামে গিয়ে নিজেদের পছন্দমত জায়গা বেছে নিয়েছি, গম্ভীর মুখে উইকিপিডিয়া থেকে বন্ধন নিয়ে পড়াশুনা করছি, তখন মিলন এসে চেঁচাল, পরীক্ষাটা কাল লাঞ্চের পরে হবে। আমরা চিৎকার করলাম, কেউ হাতের নোট উপরে ছুঁড়ে দিলাম। হুরমুর করে বেরিয়ে উত্তেজিত স্বরে সবাই একসাথে কথা বলতে থাকল। সবাই একসাথে কথা বললে কিছু বোঝা যায়না। কিছুটা শান্ত হলে বোঝা গেল, সবাই আসলে আহসান মঞ্জিল যাবার কথা ভাবছে। শুধু ভাবছেই না, চেঁচিয়ে বলারও চেষ্টা করছে। ঠিক হল, সবাই যার যার মত প্রস্তুত হয়ে ঠিক বারোটায় চানখাঁরপুলে এসে দাঁড়াবে।
বাসার পথ ধরলাম। এসেই মাথায় হাত। ভুলে মেইন গেটের চাবিটা নেয়া হয়নি। সকালে যে ক্লাসে গিয়েই মীমকে বলেছিলাম, ছুটির সময় আমাকে যেন একটা চুলের ক্লিপ বা ওরকম কিছু দেয়, যেন সিসি ক্যামেরাকে আড়াল করে মেইন গেটের তালাটা সেটা দিয়ে খুঁচিয়ে খুলে। সাততলায় চলে আসতে পারি। কিন্তু পরীক্ষার চাপে মীম ভালো করে বোঝেইনি আমি কী বলেছি। তো! দাঁড়িয়ে থাকতে হল অনেককাল। এরপর যখন একজন মহিলা বের হলেন বাড়ি থেকে, তখনই ঢোকা গেল। একটু বিশ্রাম করে ঝাল করে রাঁধা সাগরের মাছ দিয়ে পেটপুরে ভাত খেয়ে প্রবল ঘাম-বর্ষণ এর প্রস্ততিস্বরূপ সুগন্ধি স্প্রে কাপড়ে মেখে চললাম চানখাঁরপুলে। পথে অন্তরার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বারবার কল করেও যখন পাওয়া গেল না, বোঝা গেল সাজটা এখনো সে সেরে উঠতে পারেনি। মোড়ে গিয়ে দেখতে পেলাম, শ্রাবণ শ্রাবণের কড়া রোদে শরীরের সবটুকু জল পিঠের চামরার গ্রন্থি মারফত উগরে দিয়ে ভিজে চপচপে হয়ে রাগে মুখ লাল করে নিজের সাথেই গজরাচ্ছে। একটু আগে দোক্কা গাড়ী খুঁজতে গিয়ে সব ঘোড়াকে ঘাস খেতে দেখে গলদঘর্ম হয়ে ফিরে এসেছে। ঘোড়ারা যে শুধু ঘাস খাচ্ছিল তা না, সহিস আর গাড়িগুলোও উধাও। এর মধ্যিখানে সবাইকে ফোন করতে করতে সে ক্লান্ত, এবং রাগে বিস্ফোরিত। আমি পিঠ চাপড়ে আশ্বাস দিলাম,
জ্বালাতনের তেমন কিছু হয়নি। একটু পর দেখা গেল এক দঙ্গল মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণকে ঘিরে। ছেলে মাত্র আমি আর শ্রাবণ। উৎফুল্ল হয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম, আজ আমার ভাগে কজন। অঙ্কটা খুব সোজা, মেয়ের সংখ্যা-ভাগ দুই! কিন্তু এতবড় অঙ্ক আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে কুলাল না। পকেট থেকে এক দশমিক দুই কোয়াডকোর মস্তিষ্ক থেকে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে বের করে ফেললাম আমার ভাগটা।
তাহসিন-সেঁজুতি তোমরা গেলে ভালো লাগত। কেন যাব বলেও গেলে না?
আজ আহসান মঞ্জিল যাওয়ার ইচ্ছে ছিল সবার। একটা পরীক্ষাও ছিল। আমরা যখন দুষ্টরা আগে, ভদ্ররা পরে অডিটোরিয়ামে গিয়ে নিজেদের পছন্দমত জায়গা বেছে নিয়েছি, গম্ভীর মুখে উইকিপিডিয়া থেকে বন্ধন নিয়ে পড়াশুনা করছি, তখন মিলন এসে চেঁচাল, পরীক্ষাটা কাল লাঞ্চের পরে হবে। আমরা চিৎকার করলাম, কেউ হাতের নোট উপরে ছুঁড়ে দিলাম। হুরমুর করে বেরিয়ে উত্তেজিত স্বরে সবাই একসাথে কথা বলতে থাকল। সবাই একসাথে কথা বললে কিছু বোঝা যায়না। কিছুটা শান্ত হলে বোঝা গেল, সবাই আসলে আহসান মঞ্জিল যাবার কথা ভাবছে। শুধু ভাবছেই না, চেঁচিয়ে বলারও চেষ্টা করছে। ঠিক হল, সবাই যার যার মত প্রস্তুত হয়ে ঠিক বারোটায় চানখাঁরপুলে এসে দাঁড়াবে।
বাসার পথ ধরলাম। এসেই মাথায় হাত। ভুলে মেইন গেটের চাবিটা নেয়া হয়নি। সকালে যে ক্লাসে গিয়েই মীমকে বলেছিলাম, ছুটির সময় আমাকে যেন একটা চুলের ক্লিপ বা ওরকম কিছু দেয়, যেন সিসি ক্যামেরাকে আড়াল করে মেইন গেটের তালাটা সেটা দিয়ে খুঁচিয়ে খুলে। সাততলায় চলে আসতে পারি। কিন্তু পরীক্ষার চাপে মীম ভালো করে বোঝেইনি আমি কী বলেছি। তো! দাঁড়িয়ে থাকতে হল অনেককাল। এরপর যখন একজন মহিলা বের হলেন বাড়ি থেকে, তখনই ঢোকা গেল। একটু বিশ্রাম করে ঝাল করে রাঁধা সাগরের মাছ দিয়ে পেটপুরে ভাত খেয়ে প্রবল ঘাম-বর্ষণ এর প্রস্ততিস্বরূপ সুগন্ধি স্প্রে কাপড়ে মেখে চললাম চানখাঁরপুলে। পথে অন্তরার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বারবার কল করেও যখন পাওয়া গেল না, বোঝা গেল সাজটা এখনো সে সেরে উঠতে পারেনি। মোড়ে গিয়ে দেখতে পেলাম, শ্রাবণ শ্রাবণের কড়া রোদে শরীরের সবটুকু জল পিঠের চামরার গ্রন্থি মারফত উগরে দিয়ে ভিজে চপচপে হয়ে রাগে মুখ লাল করে নিজের সাথেই গজরাচ্ছে। একটু আগে দোক্কা গাড়ী খুঁজতে গিয়ে সব ঘোড়াকে ঘাস খেতে দেখে গলদঘর্ম হয়ে ফিরে এসেছে। ঘোড়ারা যে শুধু ঘাস খাচ্ছিল তা না, সহিস আর গাড়িগুলোও উধাও। এর মধ্যিখানে সবাইকে ফোন করতে করতে সে ক্লান্ত, এবং রাগে বিস্ফোরিত। আমি পিঠ চাপড়ে আশ্বাস দিলাম,
জ্বালাতনের তেমন কিছু হয়নি। একটু পর দেখা গেল এক দঙ্গল মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণকে ঘিরে। ছেলে মাত্র আমি আর শ্রাবণ। উৎফুল্ল হয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম, আজ আমার ভাগে কজন। অঙ্কটা খুব সোজা, মেয়ের সংখ্যা-ভাগ দুই! কিন্তু এতবড় অঙ্ক আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে কুলাল না। পকেট থেকে এক দশমিক দুই কোয়াডকোর মস্তিষ্ক থেকে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে বের করে ফেললাম আমার ভাগটা।
তাহসিন-সেঁজুতি তোমরা গেলে ভালো লাগত। কেন যাব বলেও গেলে না?
![]() |
দোক্কা গাড়ীর পেছনে, হাসি যখন প্রসারিত |
![]() |
বারান্দায়... |
![]() |
নবাববাড়িতে বিলিয়ার্ড খেলতে গিয়ে জারিফের সেলফি |
সবাই মিলে কোন পথে যাব, সেটা নিয়ে যখন ভেবে
যাচ্ছি, তখন দেখা গেল একটা ঘোড়ার গাড়ী। ছুটে গিয়ে কথা বললাম,
জানা গেল নবাব বাড়ির দরজায় সে নামাতে পারবে না, যেতে হবে সদরঘাট কিংবা তাঁতিবাজার। বাদ দিয়ে আবার রিকশার পেছনে ছুটলাম। এর
মাঝখানে একটা খালি লেগুনা এসে দাঁড়াল, মীম বীরের মত গিয়ে সেই
লেগুনাটা রিজার্ভ করে ফেলল। জগন্নাথ এর সামনে নামাবে। সেখান থেকে বাকিটা হাঁটব। কিন্তু
যখন মেয়েরা সবাই উঠল, আমি হেল্পারের মত ঝুলে চেঁচাতে লাগলাম 'আফা চাইপা চাইপা বহেন!', তখনই জায়েদ ছুটতে ছুটতে এসে
লেগুনায় উঠে ড্রাইভারের সাথে কথা বলেই আবিষ্কার করে ফেলল যে এই লোকটা আমাদেরকে
জগন্নাথ হলে নিয়ে যেতে চাইছে, অর্থাৎ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভেতরেই। আমরা হেসে গড়াগড়ি খেলাম, মীমের বীরোচিত সেই মনোভাব
স্তিমিত হয়ে আসা দেখে। মজার বটে! সবাই নেমে মেয়েরা নিজেরা কয়েকটা রিকশা ঠিক করে
উঠে গেল। আর তখন যোগ দিল (হবু) লেফটেনেন্ট ইয়াহইয়া, এবং আয়াত।
আমরা হেঁটে হেঁটে গুলিস্তান গিয়ে উঠে পড়লাম ঘোড়ার গাড়িতে। উঠেই সেলফি তুলে শ্রাবণ
সেটা দিয়ে দিল ফেসবুকে। এরপর যখন রিংকি ফোন করে বলল ওরা বসে আছে ইসলামপুরের জ্যামে,
তখন বললাম, একটাবার ফেসবুকে ঘুরে আসতে। আমার
ভাবতেই আনন্দ হচ্ছিল ওদের কেমন হিংসা হবে রিকশায় বসে আমাদেরকে ঘোড়ার গাড়িতে দেখে।
হাসলাম।
![]() |
যূথীর স্টাইলটা দেখো! |
![]() |
তুমি কোন কাননের ফুল গো... |
পৌঁছে দেখা গেল এক দঙ্গল মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে নবাববাড়ির ফটকে। হইহই করে
যখন টিকেট করে ভেতরে গেলাম, সেখানে প্রচণ্ড রোদ। ইতস্তত
ঘুরেফিরে-ছবি তুলে মূল বাড়িতে ঢোকার সময় দেখা গেল মীম আর আমেনা বিবি আগেই চলে
গিয়েছে। প্রতিটা সময়ে চলছিল আক্রমণাত্মক হাস্যরস। মূল ভবনে ঢুকতেই পরিবারের
নানারকম তৈজসপত্র দেখতে লাগলাম। আর আছে নানা ছবি। নানাজনের ছবি দেখে আমি তাঁদের
নানা গল্প টেনে আনতে লাগলাম। শ্রোতা নেই বুঝতে দেরী হল না। তখন ভাবলাম, একটা ভিডিও করা যেতে পারে, যেখানে আমি এক আরাম
কেদারায় বসে বলছি, "আমি এই নবাব পরিবারের সকলকে বন্দী
করে নবাবি দখল করলাম। আমি ওমর ফারুক, ঢাকার নতুন নবাব,
আমার উজির এই জায়েদ, নাজির শ্রাবণ, সেনাপতি ইয়াহইয়া, পাঙ্খাপুলার আয়াত, এবং হাজারখানেক কেজি দাসী"।
![]() |
যাঃ শ্লা! আমার কপাল বটে! |
![]() |
জায়েদ দেখাচ্ছে, বাঁ থেকে প্রথম জনকে |
![]() |
তাকে দেখাতেই অন্যেরা যখন দূরে সরে গেল! |
![]() |
তোমাদের ছেলেমেয়েরা সুখে থাকুক |
![]() |
একে একে সবাইকে পটিয়ে একটা করে ছবি তুলে নিল যে ছেলেটা |
![]() |
যা দেখছ, তা তো না! |
![]() |
শ্রাবণের চরিত্র বটে |
![]() |
কী যে হল! |
কিন্তু সবখানে ছবি তোলা নিষেধ, তাই হলনা ওসব। যখন সব দেখে হাসতে হাসতে এদিক ওদিক বেড়াচ্ছি, তখন দেখলাম, কিছু জিনিস অদেখাই রয়ে যাচ্ছে। তৈজস এর চেয়ে আগ্রহ ছিল তৈলচিত্রের প্রতি। ১৯০৬ সালের মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সেই সভার ছবিটা দেখে একটু স্মৃতিই ভর করেছিল। বাংলার (বাঙাল দেশ) রাজনীতির ইতিহাসের একটা ভালোবাসার জায়গায় মুসলিম লীগের ইতিহাস থাকতেই হয়। আমাদের বাঙাল মুসলিমরা তো অতটা কংগ্রেস করেননি। কমিউনিজমে মুসলমানেরা সবসময় পিছিয়ে। সেদিক দিয়ে ঐ মুসলিম লীগই এগিয়ে। ওখানে যাবার সময় তাই বারবার মনে পড়ছিল মুসলিম লীগের কথা। নবাববাড়ি আমাকে টানার কারণ ওই মুসলিম লীগ। সেই ছবি, নবাব সলিমুল্লাহ, লর্ড মিন্টো এবং আরও অনেকের ছবি দেখে মনে পড়ছিল নানা গল্প। সেসব গল্প শোনানোর কাউকে না পেয়ে আমি উসখুসই করতে লাগলাম। খ্যাতিমান বাঙালিদের ছবি যে ঘরে ছিল, সেখানে আমি অতিষ্ঠ হয়ে শ্রাবণকে দুই ঘর ওপাশ থেকে ডেকে আনলাম। সুরেন ব্যানার্জীর ছবি দেখিয়ে বিখ্যাত গল্পটা বললাম। এটা কোনমতেই পেটে রাখা যাচ্ছিল না। এসব দেখেটেখে বলরুমে যখন পৌঁছলাম, আমার চোখ চকচক করে উঠল। বাঈজী নেই, বসবার গদি নেই মন খারাপও কম হল না। বেরিয়ে এসে আরো অনেকরকমভাবে তোলা হল ছবি। বিখ্যাত বিশাল সিঁড়িটায় নানা ঢঙয়ে আমাদের ছবি তোলার আদিখ্যেতা দেখে সবাই বিরক্তই হচ্ছিল। যখন এসব ছেড়ে ঘাসে গিয়ে বসলাম, আড্ডাটা ঠিক তখনই জমল। কারো মুখ যেন থামছেই না!
একটা অদ্ভুতরকম খেলা হল। সবাইকে একটা করে প্রশ্ন করা হবে। উত্তরটা হতে হবে সত্যি, কিন্তু প্রশ্নটা ভদ্র হবার কোন বালাই নেই। থলের বেড়াল বের হতে শুরু হল এরপরই। যাদের প্রেমাস্পদের ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা ছিল না, তাদের ব্যাপারে জানা হল অনেক কিছু, নানাজনের ক্ষুরধার প্রশ্নের উত্তরে। বোঝা গেল, আয়াতের টসটসে চেহারা দেখে আহ্লাদে গলে আছে আমাদের ক্লাশের অধিকাংশ মেয়েই। তাদের স্বপনে শুধুই আয়াত, আমাদের ভাত নেই, এমনকি চালও নেই। আমরা নানা জনে প্রেমিক-প্রেমিকা জুটির আদলে ভাব ধরে ছবি তুলছিলাম অনেক। এর মধ্যে শ্রাবণ-রিংকির ছবি নিয়ে হল বিপত্তি। কেমন লজ্জার কথা! ওদের চেহারায় যেমন বয়সের ছাপ, তাতে ওদের ছবিটাকে কোনমতেই প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে চালানো যাচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল যেন স্বামী-স্ত্রী! আমি মহুয়াকে বলেছিলাম, তুই পিচ্চি আছিস, মাঝে গিয়ে দাঁড়া, মনে হবে দম্পতির একমাত্র সন্তান!
এই আড্ডায় জানা গেল মহুয়ার প্রেমাস্পদের কথা, যূথীর আগ্রহ-অনাগ্রহের কথা, এক মেয়ের হৃদয় ভাঙা টানের কথা, জায়েদের ক্লাস টেন পড়ুয়া স্বপ্নকন্যার নাম এবং আরও অনেককিছু। আয়াত যে ক্লাসের শুরুর সময়টায় চোরা চোখে সায়মার দিকে তাকাত, সেটা জেনে আমরা বড় পুলকিত হলাম। এই লেখা পড়ে সেটা জেনে যে সায়মাও পুলকিত-আহ্লাদিত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। রিন্তু, সানজিদা, ঈশিতা, অন্তরারও ডার্ক সিক্রেট জানা হল কিছু কিছু। আমরা অট্টহাসি দিলাম। সেসব আড্ডা শেষে হেঁটে হেঁটে সদরঘাট এসে আমরা যখন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বসলাম, তখন নিজেদেরকে প্রাচীন শহরের বাসিন্দা বলে মেনে নিতেই ইচ্ছে হল। চেঁচাতে চেঁচাতে গোলাপ শাহের মাজার পৌঁছে আমরা ছোটখাট কেনাকাটা সারলাম ক্লান্ত পায়ে, ক্ষুধা পেটে যখন গুলিস্তান পার্কের সামনের রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম, তখন শ্রাবণ অন্তরাকে নিয়ে ভেগে অনেকটা এগিয়ে গেছে। আমি মীমের কাছে গিয়ে বললাম,
-যে মানুষটা গান করে, হারমোনিয়াম তুলে রাখার আগে সে সেটা সালাম করে। যে মানুষটা হকি বা ফুটবল খেলে...
-মাঠ ছুঁয়ে সালাম করে।
-তবে কি আমি গুলিস্তান পার্ক ছুঁয়ে সালাম করে যাব?
![]() |
তুমি কার, কে তোমার... |
আবার ভাবছি, গুলিস্তানের ব্যাবসাটা ছেড়ে দিয়ে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে রেড লাইট এরিয়ার শেয়ার খরিদ করব।
মোড়ে এসে নানা কথার মধ্যে ফুটে উঠছিল নানা মানুষের কথা। সেসব নিয়ে আদি রসাত্মক হাস্যরস করতে ছাড়ছিল না কেউই। দেখা গেল, রিংকির কথা শুনলেই শ্রাবণের মুখ কেমন যেন মলিন হয়ে পড়ছে। কিসের এত দুঃখ-বেদনা, কেইবা জানে? আমার ব্যাপারে শ্রাবণ খানিকটা হতাশার সুরে বলল, তুইতো শালা বিয়ে পর্যন্ত নানাজনের সাথে টাংকি মেরে যাবি!
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি
হাসলাম, বিয়ের পরে বাদ যাবে কেন?
মীম তখন বিজ্ঞের স্বরে
মাথা ঝাঁকি দিয়ে বলল, তোর বউ
বুঝি করবেনা ওসব?
-করুক! আমিও তো স্বাদ মিটিয়ে করতে
পারছি! তাতেই হবে।
-তা বটে তা বটে! পরকীয়ার স্বাদই
আলাদা!
সত্যিই! পরকীয়ার স্বাদটা
শুধু বুঝতে পারল মীম। শ্রাবণ তাই পরামর্শ দিল,
তোরা দুজনে বিয়ে করে ফেললেই হয়ে যায়। দুজনেই দুদিকে পরকীয়া করে
যাবি। এখন যেমন নানাজনের সাথে টাংকি মারছিস। আমি মাথা নাড়লাম। মীমকে নিয়ে আর
খানিকটা মুগ্ধতা দেখাতে গেলাম, তখন অন্তরা রাগে চেঁচাল,
“ওমর, লেবু
বেশি চিপলে তেতো হয়ে যায়!”
আমি নীরবে হাসলাম। ওরা ভুলে
যাচ্ছে, তেতো লেবুতেও যে ভিটামিন সি থাকে!
ভালো হইছে!
উত্তরমুছুন