মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭

হঠাৎ একদিন নবাব বাড়িতে


ঢাকা কতটুকু? অদ্ভুত প্রশ্ন বটে। ঢাকা শহরটা অনেক বড়। এখন নদীর ওপারেও সম্প্রসারিত হয়ে গেছে। কিন্তু ঢাকা কত বড় ছিল? বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটা শহর। এবং তিন নেতার মাজারের সামনে গিয়েই শেষ হয়ে গেছে। বলায় ভুল হয়ে গেল। যেখানে ঢাকা শেষ হয়েছিল মোঘল আমলে, সেখানটায় গড়ে উঠেছে তিন নেতার মাজার। হু, সেই অযত্নে পড়ে থাকা ঢাকা গেট। যেটা থেকে বেরুলেই আমাদের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।

আজ আহসান মঞ্জিল যাওয়ার ইচ্ছে ছিল সবার। একটা পরীক্ষাও ছিল। আমরা যখন দুষ্টরা আগে, ভদ্ররা পরে অডিটোরিয়ামে গিয়ে নিজেদের পছন্দমত জায়গা বেছে নিয়েছি, গম্ভীর মুখে উইকিপিডিয়া থেকে বন্ধন নিয়ে পড়াশুনা করছি, তখন মিলন এসে চেঁচাল, পরীক্ষাটা কাল লাঞ্চের পরে হবে। আমরা চিৎকার করলাম, কেউ হাতের নোট উপরে ছুঁড়ে দিলাম। হুরমুর করে বেরিয়ে উত্তেজিত স্বরে সবাই একসাথে কথা বলতে থাকল। সবাই একসাথে কথা বললে কিছু বোঝা যায়না। কিছুটা শান্ত হলে বোঝা গেল, সবাই আসলে আহসান মঞ্জিল যাবার কথা ভাবছে। শুধু ভাবছেই না, চেঁচিয়ে বলারও চেষ্টা করছে। ঠিক হল, সবাই যার যার মত প্রস্তুত হয়ে ঠিক বারোটায় চানখাঁরপুলে এসে দাঁড়াবে।

বাসার পথ ধরলাম। এসেই মাথায় হাত। ভুলে মেইন গেটের চাবিটা নেয়া হয়নি। সকালে যে ক্লাসে গিয়েই মীমকে বলেছিলাম, ছুটির সময় আমাকে যেন একটা চুলের ক্লিপ বা ওরকম কিছু দেয়, যেন সিসি ক্যামেরাকে আড়াল করে মেইন গেটের তালাটা সেটা দিয়ে খুঁচিয়ে খুলে। সাততলায় চলে আসতে পারি। কিন্তু পরীক্ষার চাপে মীম ভালো করে বোঝেইনি আমি কী বলেছি। তো! দাঁড়িয়ে থাকতে হল অনেককাল। এরপর যখন একজন মহিলা বের হলেন বাড়ি থেকে, তখনই ঢোকা গেল। একটু বিশ্রাম করে ঝাল করে রাঁধা সাগরের মাছ দিয়ে পেটপুরে ভাত খেয়ে প্রবল ঘাম-বর্ষণ এর প্রস্ততিস্বরূপ সুগন্ধি স্প্রে কাপড়ে মেখে চললাম চানখাঁরপুলে। পথে অন্তরার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বারবার কল করেও যখন পাওয়া গেল না, বোঝা গেল সাজটা এখনো সে সেরে উঠতে পারেনি। মোড়ে গিয়ে দেখতে পেলাম, শ্রাবণ শ্রাবণের কড়া রোদে শরীরের সবটুকু জল পিঠের চামরার গ্রন্থি মারফত উগরে দিয়ে ভিজে চপচপে হয়ে রাগে মুখ লাল করে নিজের সাথেই গজরাচ্ছে। একটু আগে দোক্কা গাড়ী খুঁজতে গিয়ে সব ঘোড়াকে ঘাস খেতে দেখে গলদঘর্ম হয়ে ফিরে এসেছে। ঘোড়ারা যে শুধু ঘাস খাচ্ছিল তা না, সহিস আর গাড়িগুলোও উধাও। এর মধ্যিখানে সবাইকে ফোন করতে করতে সে ক্লান্ত, এবং রাগে বিস্ফোরিত। আমি পিঠ চাপড়ে আশ্বাস দিলাম,

বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

জলমগ্ন

ছবিঃ সংগৃহীত

সরসর শব্দ তুলে পানি কেটে এগিয়ে যাচ্ছে ভ্যানটা। পেছন থেকে যে ছোকরাটা ভ্যানটাকে ঠেলছে, পানি তার কোমর ছুঁয়েছে। কোমরটা যে তার বেশ নিচুতে, তা মানতে অস্বস্তি নেই। হুঁ, আবদুল মিয়া যে খাটো, মাত্র চার ফুট তিন ইঞ্চি, তা মানতে দোষ নেই। ভ্যান এক আজব বাহন এই শহরে। শীতের মরশুমে এরা লাগে বাড়ি পাল্টাতে, নতুন আসবাব ঘরে পৌঁছে দিতে। আর বর্ষার মরশুমে এরা জলের বাহন। জলের দু ধারে সারি সারি জেগে ওঠা ঘরবাড়িতে পৌঁছে দেয়া এই ভ্যানের কাজ। স্রোতহীন ঢেউ ওঠা শহরের রাস্তায় ছুটে বেড়ায় নানা কিসিমের বাহন। কোনটা যন্ত্রে চলে, কোনটা ঠেলে নিতে হয়। তবে সওয়ারির ভরসা যন্ত্রহীনগুলোতেই। সিএনজির গলুইয়ে পানি উঠে পরে, মাঝপথে সাপের মত ফোঁস ফোঁস আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে যায়, তাতে কে বা উঠতে চায়? ভ্যান আর রিকশা, এই শহরের জলে-স্থলে ছুটে চলে অবিরাম। আর জল মাপার জন্য আজকাল কি আর সিন্দাবাদ আছে যে লগি ঠেলে চেঁচাবে, "এক বাও মেলেএএএ না, দেড় বাও মেলে না...!"

কেউ হোন্ডা, কেউ মাইক্রো নিয়ে নেমে পরে জলের একধার থেকে। কিন্তু এ সমুদ্রের ঠাই কোথায়, তার তো জানা নেই কারোই। একটু দূর যেতেই পানি উঠতে উঠতে যখন ইঞ্জিন ডোবে, তেলের ট্যাংক ছোঁয়, ফোঁস ফোঁস আওয়াজ তুলে মেশিন নিশ্চুপ হয়, তখন চালকের দুঃসাহসী মন প্রথমবারের মত দমে যায়। মনে মনে ভাবে, মিসটেক হয়া গ্যালো। দূর স্বর্গলোক থেকে কবিগুরু ফিসফিস করে চালকের কানে কানে বলেন, জপো, এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা। কিন্তু চালকের মন বোঝে না। পরদিন সে অন্য রাস্তায় অন্য কোন খাদে পতিত হয়ে কবিগুরুর ফিসফিসানি শোনে। বছর ঘুরে আবার বর্ষা আসে, আবারও কবিগুরুর মন্ত্রধ্বনি কানে বাজে।

এ শহরের সবচেয়ে বিচক্ষণ সেই সব লোকজন, যারা বাসায় পৌঁছতে নেমে পড়েন গোড়ালিতক পানিতে, একটু পর সেটা বাড়ে। পথ এগিয়ে যায়, সেটা আরও বাড়ে। কারো বাড়ি পৌঁছতে সেটা হাঁটুজল হয়, কারো বাড়ির হদিস মেলে কোমরজলে। তাঁদেরকে যখন বাড়ির লোকজন উপহাস করে বলে, কয়টা টাকা বাঁচাতে এই এতখানি পানিতে নেমে পড়লি? মুখ গোমরা করে তারা উত্তর করে,

মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭

বৃষ্টি

ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির শব্দে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। ঝিঁঝিঁ ডাকছে, ব্যাঙ ডাকছে, তবু সেটা নিস্তদ্ধতা ছিল। রাত্রির নিস্তদ্ধতা কোন নিশ্চুপ প্রকৃতিকে বোঝায় না। রাতের শব্দগুলো রাতের প্রাণ। এই নিস্তদ্ধতা কাটিয়ে দেয় বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টি, কিংবা আলতো বৃষ্টি। বৃষ্টি আবার আলতো হয় কেমন করে, সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। বৃষ্টিও আলতো হয়। ঠিক ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নয়, কিন্তু জোরও নেই তেমন। আচ্ছা বৃষ্টি তবে কয় রকম? কঠিন প্রশ্ন। বৃষ্টির নানা রকমফের হয়। সেটা হয়তবা দর্শকের প্রাণের হাল হাকিকত দিয়ে ভাগ হতে পারে। যদিও বৃষ্টি শুধু দর্শন না, শ্রবণ, স্পর্শেও প্রবলভাবে সারা দেয়।

যখন বৃষ্টি শুরু হল, ব্যাঙদের আহ্লাদ বেড়ে গেল বহুগুন। স্বর প্রবল থেকে প্রবলতর হল। রাত্রির নিস্তদ্ধতা ঠিক তখনই ভেঙে পড়ল। তারমানে কি রাতের সাথে বৃষ্টির মিতালি নেই? আছে বৈকি! স্নিগ্ধতায় মিল আছে। প্রবল বৃষ্টি, আলতো বৃষ্টি সবই স্নিগ্ধ। আর রাত মানেই তো নিশ্চুপ স্নিগ্ধ একটা গল্প। ঝোড়ো বৃষ্টিও স্নিগ্ধ হয় বটে!

বৃষ্টি নিস্তদ্ধতা লুটে এত কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তবে গ্লানির সাথে সখ্যতা গড়তে পারে না? বৃষ্টি, দুঃখ আর গ্লানিগুলোকে তুই নিবি?