সোমবার, ২০ মার্চ, ২০১৭

দুঃখ-হিংসা-বেদনা

প্রেম শব্দটা সত্যি গোলমেলে। ঠিক কতটুকুকে আমরা প্রেম বলব, কতটুকুকে ভালোবাসা বলব, তার কোন মাপ নেই। আর সেই মাপের প্যাচের অভাবেই সবকিছুর সীমানা ওভারল্যাপিং করে বসে আছে। আমরা সেই সীমানার খোঁজে আকুল হই। বন্ধুত্ব আর প্রেমের ব্যাপারটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমরা ছাঁচে বাধতে চাই, আলাদা করতে চাই। কিন্তু এটা কতটা আলাদা? ফ্রয়েডিয়ান সাইকোলজির যে অংশগুলো নিয়ে আমরা কৌতুক করে থাকি, সে অংশগুলো আমার মানতে ইচ্ছে করে। এগুলো আলাদা করা খুব কঠিন।

হিংসা দিয়ে হয়ত বোঝা যাবে। পছন্দের মানুষকে অন্য কারো সাথে প্রেমালাপে মত্ত বা সেরকম কিছু দেখলে বুক কষ্টে ফেটে যায়। এখানে ফ্রয়েড একদম ঠিক। এই যে এমা ওয়াটসন, রুপার্ট গ্রিনকে যে দৃশ্যে চুমু খায়, আমার সত্যি বুকে ব্যাথা করছিল। কাউকে কারো সাথে দুষ্টুমির ফ্ল্যার্ট করতে দেখলেও ইচ্ছে হয় চুবিয়ে মারি ছেলেটাকে।

শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭

সিরিঞ্জ


'হ্যালো রুদ্র!', ফোনের ওপাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর।
রুদ্রের মনে পড়ে যায় অনেক পুরনো একটা বাক্য। 'তুমিইতো রুদ্র, যে দৌড়াতে পারে'। একজনের পরিচয় হিসেবে দৌড়াতে পারা বেশ অস্বস্তিকর। রুদ্রের একটা পদক আছে জাতীয় স্প্রিন্টে। তাই বলে দৌড়াতে পারে- এমন করে অপরিচিত একটা মেয়ে বলে বসলে বিরক্ত হবার কথা তার। কিন্তু রুদ্র বিরক্ত হতে পারেনি সেদিন। তবে আজ সন্ধ্যার একটু পরে ব্যাচেলর ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়া সেই পুরনো কণ্ঠস্বর কিছুটা বিরক্তি জাগায়। রুদ্র ছোট্ট করে উত্তর করে, 'বলছি'। ওপাশ থেকে টেনে টেনে কণ্ঠস্বর বলে, 'আমি মিলি'। মিলির পরিচয় ঠিক এখানে শুরু নয়। ফিরতে হবে সেই দিনে। সেদিনও একটা কণ্ঠস্বর ছিল এই মিলি। পেছন থেকে বলেছিল, 'তুমিইতো রুদ্র, যে...'। সেটা ছিল বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র উৎসব, পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান মিলনায়তনে। চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিল রুদ্র, আর পেছন থেকে ডাক শুনেছিল মিলির। আজ যেমন 'চিনেছি' বলার আগে বিরক্তি কাটাতে রুদ্র একটু সময় নেয়, সেদিনও এরকম সময় নিয়েছিল। কৌতূহল কাটাতে। এরপর ধীরে ধীরে ঘুরে তাকিয়ে বলেছিল, 'হ্যাঁ। এবং আমি হামাগুড়ি দিতেও জানি'

'মার্কস লোকটা কেমন?' ফোনের ওপাশ থেকে কথা শুরু হয়।

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

নারী দিবসঃ আমার শ্রদ্ধা আমার ভাবনা


আমার ভাবির যেদিন মেয়ে হয়, সেদিনকার কথা। আমি শুনলাম কথাটা, অনেক দূরে বসে, এবং ধ্বক করে উঠল বুক। মেয়ে! আবারো সেই ভোগান্তি!
আমাদের জন্য ভোগান্তি নয়, কিন্তু আমি যতই অস্বীকার করি, আমার প্রিয়তমা ভাতিজীর জন্য সেটা ভোগান্তির হবেই। ওর জীবনের নানারকম কষ্টের একমাত্র কারণ হবে ও নারী। এবং সেই কষ্টগুলোর প্রতিটির পেছনে কাজ করবে অন্য কারো অন্যায়। আমরা সেটা সহ্য করব। প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে সয়ে আসছি।

বাণী গল্প রবীন্দ্রনাথ শুরু করেছিলেন যেভাবে-
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে আকাশের মেঘ নামে, মাটির কাছে ধরা দেবে ব'লে। তেমনি কোথা থেকে মেয়েরা আসে পৃথিবীতে বাঁধা পড়তে।
তাদের জন্য অল্প জায়গার জগৎ, অল্প মানুষের। ঐটুকুর মধ্যে আপনার সবটাকে ধরানো চাই-- আপনার সব কথা, সব ব্যথা, সব ভাবনা। তাই তাদের মাথায় কাপড়, হাতে কাঁকন, আঙিনায় বেড়া। মেয়েরা হল সীমাস্বর্গের ইন্দ্রাণী।
 

আচ্ছা, একটা বখাটের দল যখন রাস্তায় হেঁটে যাওয়া একটা মেয়ের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে, তখন মেয়েটার কেমন লাগে? আমি সাইকোলজির ছাত্র নই, আমার ওসব বোঝার সত্যিকারের ক্ষমতাটা নেই। আসলে, পুরুষ হয়ে জন্মানোয় আর কখনো ওটা জানার সুযোগ হবে না। এবং এই বিশ্রী স্বাদটা নেবার ইচ্ছে কারো শখে জাগবেও না কখনো। কিন্তু সেই পুরুষগুলো? যাদের চোখ জ্বলজ্বল করে, কিংবা ঠোট ভিজে ওঠে? ওদের কখনো মনে হয়েছে কথাগুলো?

ভারতীয় একটা সাইটে দেখলাম ওঁরা লিখেছে,
মেয়েদের এটা করা উচিৎ না,
মেয়েদের ওটা করা উচিৎ না...
আসলে মেয়েদের এসব চুতিয়াদেরকে জন্ম দেয়াই উচিৎ না যারা এসব বলে। 

এটা তাঁরা ছেপেছে কৌতুকের মত করে ইলাস্ট্রেশন করে। আসলে মেয়েরা মা হন বলে তাঁরা এত মহৎ হয়ে পড়েন। যে ছেলেটা ঐসব অশ্লীল কথা সাবলীল ভঙ্গিতে বলে যেতে পারে সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েটাকে নিয়ে, তার কখনো মনে পড়ে না, তার মা একসময় তরুণী ছিলেন, এবং তার মত অনেক ছেলেরা ঠিক ঐভাবে ঐ মন্তব্যগুলো করেছে তাঁকে নিয়ে। সেই মা কখনো জানতে পারেন না, তরুণী থাকতে যে শব্দগুলো তাঁকে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছে জীবনে, সেই শব্দগুলো তাঁর ছেলে বাইরে অবলীলায় উচ্চারণ করে কোন মেয়েকে কুঁকড়ে দিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে, এবং ঘরে এসে অবলীলায় ভাত গিলছে। মায়ের কথাটা ভাবলে হয়ত ভাতগুলো গলায় আটকে যেত। 

সাম্যতা বা স্বাধীনতার অর্থ কিন্তু আমরা আজকাল প্রায়ই গুলিয়ে ফেলি। কিন্তু সেই গুলিয়ে ফেলবার অনেক আগে, একদম শুরুতেও কিন্তু আমরা বৈষম্য টেনে আনি। ধরুন আমার বাবা যদি আমাকে আজ ফোন করে বলেন, 'তুমি লিখেটিখে কিছু টাকা পাও না? আগামী মাসে আমাকে দেড় কোটির মত টাকা দিও তো, জমি কিনব একটা।' আমি কি তখন হাসব? আমাকে যদি বলা হত ভাতিজার জন্য চিপস কিনে এনো, কিংবা মায়ের জন্য এক কেজি আপেল এনো, সেটা স্বাভাবিক ছিল। সেটা হয়। কিন্তু কেমন করে আমি দেড় কোটি জোগাড় করব? সামর্থের প্রশ্ন আসে এতে। কিন্তু সেই সামর্থ্য কি আমার আছে? এক মাসে সেই টাকা জোগাড় করার মত সামর্থ্যও কি আমার আছেনেই। আমরা সাম্যতার বিচার করব শারিরীক-মানসিক সামর্থ্য দিয়ে।