শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

অবলা


-"এই যে শুনেন!"
রহিমউদ্দিন বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গ্রামের ছোট্ট বাজারটায় তার একটা চায়ের দোকান আছে। টিনের ঘর, সামনে দুইটা বেঞ্চি পাতা। মহাজনেরা আড়ৎ বন্ধ করে এসে বসে আয়েশ করে লাল চায়ে ভিজিয়ে বিস্কুট খায় তার দোকানে। সেই টং খুলতে যাবার জন্য সকালে পান্তা খেয়ে বের হবার সময় তার বিবি মোসাম্মাৎ আয়েশা বেগমের কোমল কণ্ঠ। রহিমউদ্দিন তাকায়, বিরক্তিভরে।
-কও।
-বাজারে নতুন কাকরোল উঠছে, আমার জন্যে আনবেন একটু?
-মনে থাকলে আনমুনে।
বলেই বেরিয়ে যায় রহিমউদ্দিন। বউ তার পোয়াতি, আট মাস চলে।

রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬

আলাভোলা উড়নচণ্ডী


এক.
আমরা প্রেম করতাম আরো বিশ বছর আগে, আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে সেই বিশ বছর আগেই। প্রেমের আগে বন্ধুত্ব ছিল এক বছর, প্রেম ছিল চার-পাঁচ মাস। এবং প্রেমের পরে বন্ধুত্ব ছিল কয়েক বছর। তার হিসেব নেই।  যেদিন অনুরাধা আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন চৈত্র মাস ছিল, এটুকু মনে আছে। সালটা ছিয়ানব্বই। আমার খুব একটা খারাপ লাগছিল বলবনা। কারন নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম তার আগেই। আর অনুরাধা ঝরঝর করে কাঁদছিল। মেয়েদেরকে ইশ্বর এ পৃথিবীতে কাঁদতে পাঠিয়েছেন কিনা কে জানে! যেদিন আমাদের প্রেম হয়, সেদিনও তো ও কেঁদেছিল। অবশ্য সে কান্না হয়তবা ছিল হারানোর ভয়ের। সেই অল্প কয়দিনের প্রেম ছিল একদম দায়সারা রকমের। এই ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসার কথা বলা, আর দুয়েকটা চিঠি দেয়া। আর একদিন আনন্দতে দেখতে গিয়েছিলাম একটা সিনেমা। সালমান শাহের মহামিলন। ববিতা ছিল সিনেমায়। অনুরাধা ছিল সালমান শাহের পোকা। ওর দিদির সাথে প্রায়ই হলে যেত সালমান শাহের মুভি দেখতে। সেসময় নায়ক বলতে আমরা একজনকেই চিনতাম। আমি আলাভোলা মানুষ, মুভি দেখবার কথা তেমন মনে আসত না। শুক্রবার যখন বাড়ির সবাই বই দেখতে বসত বারান্দায় টিভিটা এনে, আমি তখন ওপরতলায় পুরনো ম্যাগাজিন নিয়ে হাই তুলতাম। শুক্রবারের সকাল-দুপুর-বিকেল পুরোটাই ছিল হাই তোলার।

বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

মস্তিষ্ক

সে একটা উপহার পেল। তাতে মোড়কে মোড়ানো ছিল কসাইখানা থেকে কিনে আনা একটা ছাগলের মস্তিষ্ক। সাথে ছোট্ট একটা চিরকুট। তাতে লেখা-
"ছাগলের মস্তিষ্ক নানা কাজে লাগে। এই ধরুন খাওয়া, কিংবা স্বল্পবুদ্ধি মস্তিষ্কের রিপ্লেসমেন্ট।"

সোমবার, ২ মে, ২০১৬

কুলাঙ্গার

বুড়োর নাম  তোরাব আলি। হাড় জিরজিরে, মাথায় কদম ছাট সফেদ চুল, থুতনিটা যেন দুপাশ থেকে চেপে বসেছে চোয়াল ঢেকে। চোখে সে তেজ নেই আর। নিমতলির একটা পুরনো যন্ত্রের দোকানে একের পর ইলক্ট্রনিক্স যন্ত্র ভেঙ্গে যাচ্ছে। সকাল নয়টায় বসে, একটানা রাত নয়টা পর্যন্ত চলে ও কাজ। কাজটা খুব সোজা। ঘড়ি, কম্পুটার, ভিসিআর, টিভি আর নানারকম যন্ত্রপাতি  কেজি দরে কিনে আনে দোকানের মালিক আকবর মিঞার ছোট শালা এহতেশাম। সেগুলো থেকে প্রয়োজনিয় জিনিস ভেঙ্গে বের করা। এই মহল্লায় এই কাজটা চলে বহুত। ঠুক ঠুক আওয়াজ শোনা যায় সকাল-সন্ধ্যা। একটু বিরাম নেই।  ১৭ বছর হল আকবর মিঞার এই দোকানে কাজ জুটেছে। ঈদ-মহররম ছাড়া তেমন দিন যায়নি অলস।

দেশ স্বাধিন হবার সময় বুড়োর বয়স আঠারো। না ঐ মিলিটারির জুলুমের কথা না, তারো আগে দেশ স্বাধিন হয়। সাহেবরা হঠাৎ একদিন সব গুটিয়ে নিজ মহলে ফেরে। ভারত ভেঙ্গে দু-টুকরো। পাকিস্তান নাম নেয় দেশ।