বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা চারপায়ে হাঁটবার পূর্বমূহুর্তে

কথিত আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা যেভাবে  চা খেতে জানে, সেটা শিখতেও অন্যদের ম্যালা দিন লাগে। কথা চালু হবার পেছনে মনে হয় ঐতিহ্য ব্যাপারটা আছে। আমাদের ঐতিহ্য বেশ ভারী। অন্তত এ দেশে যদি ঐতিহ্যের দিক থেকে একটা গোষ্ঠীকে মাপতে যাওয়া হয়, ঢাবির নামটা ওপরেই আসবে সন্দেহ নেই। কিন্তু যা ঘটছে দিনে দিনে, মুখ লুকবার জায়গা থাকবেনা। আমাদের ঐতিহ্যটা যে উগ্র পেশিশক্তির চেয়ে বেশি কিছু, সেটা প্রত্যেকের কানে কানে গিয়ে বলে দিয়ে আসতে হবে হয়তবা। হয়তবা লিখে দিতে হবে আমাদের প্রতিটা নোটিশে, পরীক্ষার প্রশ্নে, ভর্তির আবেদনপত্রে, ক্যাম্পাসের প্রতিটা ঘরের দরজায়। উল্টো রাস্তা আর প্রশ্ন ফাঁস নয়, আজকের ঘটনাটা শুনুন না!

সন্ধ্যেটা অতটা খারাপ ছিলনা। সন্ধ্যার আগে উত্তম কুমারের একটা সিনেমা দেখে নায়িকা তনুজার চোখ কল্পনায় খুব করে গেঁথে গিয়েছিল। সাড়ে ছটায় ক্লাস ছিল স্প্যানিশের, ছয়টা বিশে টিএসসিতে ঢুকতে অক্টাভিয়ানের সঙ্গে দেখা।

শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭

এ-লো-মে-লো

'চিল মুড' শব্দটার একটা অর্থ খুঁজছিলাম। কিন্তু ঠিক মিলছিল না কিছু। 'মাস্তি' হতে পারত, যদি সেটা বাংলা শব্দ হত। 'ফুর্তি' শব্দটা সবার মাথায় আসবে, কিন্তু সেটা ঠিক চিল মুড এর সঙ্গে যায়না। ফুর্তির মধ্যে একধরনের ছেলেমানুষি ভাব আছে। আমি যখন কোন পরীক্ষা দেই, আমার মস্তিষ্ক তখন চকলেট খাবার, কিংবা প্রেমে আপ্লুত হবার পরমূহুর্তের মত অবস্থায় থাকে। কোনরকম ক্লান্তি কাজ করেনা। তাই বারবার মনে হচ্ছিল, পরীক্ষা জিনিসটা সবসময় চিল মুডের আবেদন নিয়ে আসে আমার জীবনে। যদিও জিনিসটার প্রতি বিরক্তি আছে, মাসখানেকের পরীক্ষা আমাকে হাঁপিয়ে তোলে, তবু পরীক্ষার সময়টুকুতে আমি  ধ্বসে পড়িনা। পরীক্ষার হলে আমার কষ্ট হয়না কোন। ব্যাপারটা মাথায় এল দুদিন পর পরীক্ষা বলে।

পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমনব হচ্ছে সেটা আলাপ করবার মত কিছু না। তবে আজ দিনভর বৃষ্টি সবকিছু এলোমেলো করে দিল। 'ডিভাইস' জিনিসটা আমাদের জীবনে খুব ভালো কিছু এনেছে বলে আর মনে হচ্ছেনা। আজ দুপুরে বৃষ্টিতে যখন রাস্তাঘাট (একসময় লেখা হত নদী-নালা) ভেসে যাচ্ছে, তখন আমাদের ক্লান্তি এল। একটা ঘরে তিনটা মানুষ, আহমাদ, ইব্রাহিম, এবং আমি। হঠাৎ দেখা গেল একই ঘরে বসে আমরা তিনজনে আলাদা তিনটা সিনেমা দেখছি! কম্পিউটারের বড় স্ক্রিনে আহমাদ ফরেস্ট গাম, ইবরাহিম মোবাইলে কোন একটা যুদ্ধের ছবি, এবং আমি উত্তম কুমার-শর্মিলা ঠাকুরের অমানুষ দেখছি। বাংলা ছবিই আমার ভালো হজম হয়।

সন্ধ্যাটা ছিল বেশ ভেজা, ঘুমুনোর জন্য আদর্শ। যেহেতু পড়তে বসতে হবে, আমি তাই বললাম, "চা খাবি?"
চায়ের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে দেখা গেল চিনি নেই। বললাম তবে গুড়ের চা হোক, গুড় তো আছেই। এরপর মনে পড়ল, দিন দুয়েক আগে চায়ের প্যাকেটটা আমিই শেষ করেছি। তাহলে? কফি হোক, অবশ্যই গুড়ের কফি। এবং এখন যদি ফ্রিজ থেকে দুধ (ফ্রিজে গরুর খাঁটি দুধ থাকে প্রায়ই) বের করে ভেজাই, সেটা গলতে বেশ সময় নেবে। শেষ পর্যন্ত  যেটা তৈরী হল, সেটা গুড়ের ব্ল্যাক কফি। কৌতুক করে বললাম, এর মধ্যে দু টুকরো আদা দিয়ে দিলে কেমন হয়?

জিনিসটা খেতে বিচ্ছিরি ছিল যদিও, তবে সেই কফিতে টোস্ট ভিজিয়ে খেয়ে ক্ষুধাটা তো কমল! কিন্তু ও কি চুমুকে শেষ করা যায়? বেসিনে ঢালতে হল অর্ধেকটা। শেষে মনে মনে নিজেকে গালি দিতে হল, শালা বাঙাল!

দুদিন পর নিউট্রিশন পরীক্ষা। জিনিসটা যতই কিউট হোকনা কেন, একটা বাচ্চার কোন মাসে কোন অঙ্গ তৈরী হয়, সেসময়ে কোন খাবারটা মাকে খেতে হবে, সেটা মুখস্থ করানো অত্যাচার। জিংক কিংবা সেলেনিয়াম কয় মিলিগ্রাম দিনে খেতে হবে, নইলে কোন কোন রোগ হতে পারে, সেটার আবার কেমন লক্ষণ দেখা যাবে, সেটা কতটা ভয়ঙ্কর, তা শুধু ডাক্তার আর নিউট্রিশনের লোকজন জানে। আর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের কত পার্সেন্ট শিশু স্টান্টেড ছিল, ২০০৪ থেকে সেটা কতটা উন্নত, সেই পরিসংখ্যান গ্রাফসহ মুখস্থ করা নিজেকে অত্যাচার করার শামিল।

উত্তম কুমারকে দেখে মনে হচ্ছিল, একদিন যদি এমন হয়, আমি কোথাও ক্লাস নিচ্ছি, সেই ঘরটায় একটা মানুষ ঢুকল, এবং আমার কথা বন্ধ হয়ে গেল। ধীরে ধীরে আমি কলমটা টেবিলে রেখে খানিকক্ষণ চুপ থেকে কাউকে ফিসফিসিয়ে বলব, এক কাপ চা হবে? এরপর নিজের কপাল রগড়ে অনেকটা শব্দ করে বললাম, "উইল ইউ প্লিজ গেট আউট?"

এটুকু পড়ে উচ্ছ্বাস নিশ্চয়ই বলবে, শালা আজকাল মালটাল বেশি খাচ্ছিস নাকি?