শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭

গল্প নামের অনেকগুলো গল্প

ঝাপসা হয়ে আসা দুঃখী বকুলেরা

এটা একটা গল্প। মহাজগতের দুধারে বাস করা দুটো মানুষের গল্প। বিহঙ্গমা বিহঙ্গমীর গল্পের মত হতে পারে। আবারো হতে পারে সফল অভ্যুত্থানে হটিয়ে দেয়া হয়েছে যে প্রেসিডেন্ডকে, তার নির্বাসিত জীবনের গল্পের মত, যেমনটা মার্কেজ লেখে। গল্পটার গল্পগুলো যেহেতু অকল্পনীয় রকমের অবাস্তব, তাই শুরু নেই, এবং শেষ নেই। আছে অনেকরকম মধ্যিখানের কথা। এই যেমন এক বিকেলে ময়লার ঝুড়িটার টুকরো কাগজে ভারী হবার মত একটা গল্প আছে। আবার আরেকটা গল্প আছে রেলের জানালার পাশে। ঝক-ঝক ঝক-ঝক শব্দসুরের ফাঁকে কেমন করে যেন সেসব তৈরী হয়ে গেছে। দুরুত্বটা যেহেতু বহু আলোকবর্ষ দূরের, তাই ভালোবাসা কখনো এধার থেকে ওধারে পৌঁছয় না। কে জানে, কোনপাশে ভালোবাসা তৈরী হয়না বলেই, কিংবা দুরুত্বটা বহু আলোকবর্ষ দূরের বলেই। দুধারের গল্পটাই শহুরে গল্প। তার মধ্যেও আধটুকরো গ্রামের সরলতা। অল্পখানি কল্পনার মিষ্টতা। বিন্দুখানি লেখনীর প্রাঞ্জলতাও যে নেই তেমন না। 

গল্পটায় ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের ধারের নারিকেল গাছের কিছু স্মৃতি আছে। কপোত-কপোতির দুপুরের সূর্যস্নান নিয়েও অনেক কথা আছে। কে জানে! সবকিছু কেন যে কাগজে মুচড়ে ময়লার ঝুড়িতে করে শহরের প্রান্তে বিশাল কোন কাকের ভোজালয়ে বিরক্তির উদ্রেক করতে গিয়ে জোটে! গল্পটায় অনেক নিষ্ঠুরতা আছে। দুপাশের ভালোবাসা মাঝপথে গিয়ে অন্য কোথাও চলে গেলেও নিষ্ঠুরতাগুলো, দুঃখগুলো গিয়ে ঠিকই ছুঁয়ে আসে। কর্ণেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়াকে যখন ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করানো হয়েছিলো, তাঁর বহু বছর আগেকার এই গল্পগুলোও মনে পড়ে। সেবারের গল্প, যেবার জিপসিরা শীতের অনেক আগেই চলে এসেছিলো। বুড়ির ঝোলায় যে শামুকের মালাটা থাকে, সেখান থেকে টুপ করে পড়ে যাওয়া একটা গল্প সুড়সুড় করে এসে পড়েছিলো জগতের দু মাথার মানুষ দুটোর কাছে। দুজন দুজনকে ঘেন্না করতে করতে ভালোবেসেছিলো। সমুদ্রের এপার থেকে ওপারে সাতরে পার হয়ে যাওয়া একটা নারকেলের খোলসে আবছা কালিতে লেখা ছিল, বিপ্লব। 

পেন্সিল ব্যাগে জমে জমে থাকা বকুল ফুলগুলো যখন শুকিয়ে মলিন হয়েও সুগন্ধি ছড়াতে থাকে, তখন একটা মানুষের প্রয়োজন হয় বেদের তাগা। হাতে বাঁধবার পর সেটা আর বকুল ফুলের গল্প থাকেনা। একতোড়া কাগজের মধ্যে চাপা পড়া একটা বকুলের মালা হয়ে যায়। গেঁথে থাকা প্রত্যেকটা ফুল হয় বহু আলোকবর্ষ দূরের। তারচে পেন্সিল ব্যাগের প্রতিটা বকুলই হয় খুব আপন। দিন দিন নতুন বকুল আসে, যারা খুব শীঘ্রই মলিন হয়। 

গল্পটা এক কেরানির। দিনভর কাগজে কয়লার হিসেব লিখে যক্ষ্মার বসে যাওয়া কাশি নিয়ে সন্ধ্যেয় কুড়ের মেঝেতে গা এলিয়ে দিয়ে একটা প্রদীপ জ্বেলে বসে। সেই প্রদীপ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে এক ছনের ঘরের দরোজার ওপাশে আবছায়া প্রতিকৃতি তৈরী করতেই সে ঘরের মানুষটার দিনভর হরিণ ঘাস খাওয়াবার ক্লান্তি ছায়াটাকে আগুন করে ফেলে। সেই আগুন গ্রাস করে মাঠ, গাছ, মাকড়সার জাল, সেই জালের ভারটুকু বওয়া পাইন বৃক্ষ, আর জলের কূপ। হাওয়া হয়ে উড়ে যায় জল। সেই আগুন আরও সর্বগ্রাসী হয়। কিন্তু একটা বকুল গাছ, দেবদারু গাছকে চুমু খেতে খেতে ধীরে সুস্থে হেঁটে হেঁটে যায়। বহুদূরে যায়। এরপর হঠাৎ করে ছাই হয়ে যায়। বাতাসে ওড়ে। 

জার নামের বেড়ালটা মহান অক্টোবর বিপ্লবের একশটা বছর পরেও স্পষ্ট স্বরে বলে, ম্যাও!